ইসলামাবাদ: মুম্বই ২৬/১১ হামলার মূল চক্রী এবং জামাত-উদ-দাওয়ার প্রধান হাফিজ সইদকে জঙ্গি ঘোষণা করল পাকিস্তান। আন্তর্জাতিক স্তরে প্রবল চাপের মুখে হাফিজ সইদকে সন্ত্রাসবাদী হিসেবে ঘোষণা করতে বাধ্য হল পাকিস্তান৷ সোমবার পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট মামনুন হুসেন একটি অর্ডিন্যান্সে সই করেন৷ সেই অর্ডিন্যান্সে লেখা ছিল রাষ্ট্রসংঘ যে সব সংস্থাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে, তাদের পাকিস্তানও নিষিদ্ধ ঘোষণা করল ৷ এর ফলে জামাত-উদ-দাওয়া সহ মোট ২৭টি দল নিষিদ্ধ হল পাকিস্তানে৷
২৬/১১র মাস্টার মাইন্ড হাফিজ সইদকে আগেই জঙ্গি ঘোষণা করেছে আমেরিকা। কিন্তু পাকিস্তান কোনও ভাবেই লস্কর-ই-তৈবার প্রধানকে নজরবন্দী করে রাখলেও জঙ্গি ঘোষণা করছিল না। উল্টে কয়েকমাস আগে তাঁকে মুক্ত করে দেওয়া হয়। তার পর থেকে প্রকাশ্যেই কাশ্মীরে স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য জিহাদ ঘোষণা করেছিলেন তিনি। হাফিসের এই হুঁঙ্কারকে সমর্থন জানিয়েছিলেন প্রাক্তন পাক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশারফও।
এরপর থেকেই আমেরিকা ক্রমশ চাপ বাড়াচ্ছিল। সেই চাপের মুখে পড়েই সম্ভবত সোমবার পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি হাফিজ সইদকে জঙ্গি ঘোষণা করার অর্ডিন্যান্সে স্বাক্ষর করেন। পাক জাতীয় সন্ত্রাস দমন শাখার পক্ষ থেকে এই খবরের সত্যতা স্বীকার করা হয়েছে। এই অর্ডিন্যান্সে স্বাক্ষরের পরেই হাফিজ সইদ এবং তাঁর সংগঠন জামাত–উদ–দাওয়াকে সরকারি ভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হল পাকিস্তানে।
তবে প্যারিসে ফিনানশিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সের একটি মিটিং-এর ঠিক আগেই পাকিস্তানের এই সিদ্ধান্তের আরও কারন আছে৷ শোনা যাচ্ছিল সেখানে আমেরিকা ও ভারত পাকিস্তানকে গ্রে-লিস্টে ফেলে দেবে৷ এই তালিকায় থাকা মানে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে খরচ বৃদ্ধি পাবে৷ এপ্রসঙ্গে উল্লেখ্য, ২০১২ সালে পাকিস্তান এই লিস্টে নাম তুলে ফেলেছিল৷ এর জন্য ৩ বছর ভুগতে হয় তাকে৷ হয়তো সেই করণেই এবার আর কোনও ঝুঁকি নিতে চায়নি ইসলামাবাদ৷ তড়িঘড়ি হাফিজ সইদকে সন্ত্রাসবাদী ঘোষণা করে সাধু বনে গেল তারা৷
উল্লেখ্য, রাষ্ট্রপুঞ্জ, এখনও পর্যন্ত এই নিয়ে ২৭টি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করেছে। প্রেসিডেন্ট মামনুন হুসেনের সই করা অর্ডিন্যান্সের ফলে পাকিস্তানও সেগুলি নিষিদ্ধ হওয়ায় সেদেশে নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে লস্কর-ই-তৈবা, জামাত-উদ-দাওয়া, হারকত-উল-মুজাহিদিন, ফালাহ-ই-ইন্সানিয়াত ফাউন্ডেশনের মতো একাধিক সংগঠন। এই সংগঠনগুলি অ্যান্টি টেররিজম অ্যাক্ট (এটিএ), ১৯৯৭-র আওতায় চলে এল। এটিএ অ্যাক্টের সেকশন ১১-বি এবং ১১-ইইতে যে সংশোধন করা হয়েছে, সেটা হাফিজ সঈদের জন্যে যথেষ্ট সমস্যা কারণ। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি এটিএ অ্যাক্টে যে সংশোধন আনা হয়েছে, তার জেরে এই আইন নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোর ওপর লাগু হলেই, তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন