লাশ কাটা ঘরে শায়িত বাবার দেহ, জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা দিল মেয়ে - Aaj Bikel
লাশ কাটা ঘরে শায়িত বাবার দেহ, জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা দিল মেয়ে

লাশ কাটা ঘরে শায়িত বাবার দেহ, জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা দিল মেয়ে

Share This


বাঁকুড়া  : লাশ কাটা ঘরে শায়িত বাবার দেহ, জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা দিল মেয়ে | বাঁকুড়ার ছাতনা থানার আনন্দবাজার গ্রামের ঘটনা |

নিজের জীবনের সব থেকে কাছের একজন মানুষকে হারানোর ঘটনার ২৪ ঘন্টাও কাটেনি। তখনও ময়না তদন্তের জন্য অপেক্ষায় লাশ কাটা ঘরে পড়ে রয়েছে দুর্ঘটনায় প্রান হারানো বাবার মৃতদেহ। কিন্তু একরত্তি দীপিকার কঠোর জেদের কাছে হার মানল অপ্রতিরোধ্য সেই বাধা। চোখের জল মুছে জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা দিতে যথা সময়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে হাজির হল দীপিকা। কোনোক্রমে পরীক্ষা দেওয়ার পর পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসতেই দীপিকার দুচোখ বেয়ে নামল শোকের ধারা।

দীপিকা বাউরি। বাড়ি বাঁকুড়ার ছাতনা থানার আনন্দবাজার গ্রামে। বাবা সুবোধ বাউরী ছিলেন পেশায় ট্রাক চালক। দীপিকারা চার বোন এক ভাই। বড় সংসারে বিভিন্ন ভাবে খরচ বাঁচিয়ে ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা চালাতেন সুবোধ বাবু। বড় মেয়ের বিয়ে দেওয়ার পর থেকেই সুবোধ বাবু মেজো মেয়ে মেধাবী দীপিকাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে প্রায়ই বলতেন লেখাপড়া করে দীপিকা চাকরী পেলে সংসারে আর অভাব থাকবে না। কথা দিয়েছিলেন সবকাজ ছেড়ে সোমবার মাধ্যমিকের প্রথম দিন নিজে পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে যাবেন দীপিকাকে। কিন্তু দীপিকার জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষার ঠিক আগেই ঘটে গেল সুবোধবাবুর জীবনের ছন্দ পতন। রবিবার দুপুরে ঝাঁটীপাহাড়ি থেকে একটি ট্রাকে করে জোড়হিড়ার একটি কারখানায় লৌহ আকরিক নিয়ে যাওয়ার পথে শালুনি মোড়ের কাছে উলটো দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি ধাক্কা হয় সুবোধ বাবুর ট্রাকের। গুরুতর জখম অবস্থায় তাকে বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।

 রবিবার রাতেই খবরটা পৌঁছায় বাড়িতে। কান্নায় ভেঙে পড়ে তাঁর পরিবার। শোকে পাথর হয়ে যায় দীপিকাও। কিন্তু সোমবার সকাল হতেই ঘোর কাটে দীপিকার। বাবার স্বপ্নের কথা ভেবে মনে জোর আসে। প্রতিবেশী এক দিদিকে সঙ্গে নিয়ে নিজেই ছাতনা বাসুলী বালিকা বাণীপিঠে পৌঁছে পরীক্ষায় বসে দীপিকা। পরীক্ষা দেওয়ার সময় পরীক্ষা কেন্দ্রের কেউ জানতেনই না দীপিকার জীবনের উপর দিয়ে বয়ে গেছে এত বড় ঝড়। পরীক্ষা শেষ হতেই সংবাদ মাধ্যমের কাছে শুনে হতবাক পরীক্ষা কেন্দ্রের পরীক্ষকরা। পরীক্ষা দিয়ে দীপিকা জানান,"এখন চাই এগিয়ে যেতে। সামনে এখন শুধুই বাবার চোখে দেখা স্বপ্ন।"

ছাতনা বাসুলী বালিকা বানীপীঠ প্রধান শিক্ষিকা রিতা চট্টোপাধ্যায় জানান," দীপিকার মনের জোর আগামী দিনে বহু ছাত্র ছাত্রীর কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। মেয়ের মনের জোর দেখে হতবাক পরিবারের অন্যান্যরাও।

কোন মন্তব্য নেই: