গুয়াহাটি : অসম-মিজোরাম সীমা বিবাদের নিষ্পত্তি করতে কেন্দ্ৰীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্ৰী রাজনাথ সিঙের কাছে জরুরি চিঠি পাঠিয়েছেন মিজোরামের মুখ্যমন্ত্ৰী লাল থানহাওলা। লাল থানহাওলা তাঁর চিঠিতে লিখেছেন, ১৯৭২ সালে মিজোরাম যখন কেন্দ্ৰীয়শাসিত অঞ্চল হিসেবে মর্যাদা পেয়েছিল তখন প্রতিবেশী দুই রাজ্য অসম ও মিজোরামের সীমা এলাকা সঠিকভাবে চিহ্নিত হয়নি। ফলে সাম্প্রতিকালে ভুল বোঝাবুঝির ফলে দুই রাজ্যের সীমান্ত অঞ্চল কচুরতলকে নিয়ে (অসমের হাইলাকান্দি জেলার অন্তর্গত) বিবাদের সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে গত ১৯৯৫-৯৬ সালে দুই রাজ্যের মুখ্যসচিব স্তরে আলোচনা হলেও কোনও সমাধানসূত্র বের হয়নি বলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রেরিত চিঠিতে উল্লেখ করেছেন মিজোরামের মুখ্যমন্ত্ৰী লাল থানহাওলা।
হাইলাকান্দির কাঠলিছড়া এলাকার আন্তঃরাজ্য সীমান্ত এলাকা অসমের কচুরতলে চলমান প্রতিবেশী দুই রাজ্যের জমি বিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে পড়শি দুই রাজ্য সরকারের কাছে গত ১১ তারিখ উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট চেয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।
উল্লেখ্য, হাইলাকান্দির কাঠলিছড়া এলাকার অসম সীমান্তে কচুরতলে শনিবার (১০ মার্চ) বেলা প্রায় ১২টা নাগাদ মিজো আগ্রাসনকারীদের তাড়াতে অসম পুলিশকে প্রথমে লাঠিচার্জ এবং পরে কয়েক রাউন্ড গুলি চালাতে হয়েছিল। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন জখম হয়েছিল বলে জানা গেছে। উন্মত্ত মিজো হানাদারেরা অসমবাসীর তিনটি বসতঘর ভস্ম করে দিলে ক্ষুব্ধ জনতা মিজোদের অবৈধভাবে নির্মিত ছাউনি ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছিলেন।
গত প্রায় দশ-বারোদিন আগে কচুরতলে একটি ওয়েটিং শেড তৈরি করেছিল মিজোরামের কয়েকটি বেসরকারি সংগঠন। অসম প্রশাসন সেই নির্মাণ ভেঙে দিয়েছিল। এর পর থেকে প্রতিবেশী রাজ্যের কয়েকটি বেসরকারি সংগঠনের নেতৃত্বে কতিপয় মানুষ ব্যাপক চেষ্টা করছিল ফের একটি ভবন নির্মাণ করতে। বৃহস্পতিবার (৮ মার্চ) সকালে তারা আবার আসে।
এদিনও অসমে নিয়োজিত নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বাঁধে। এর পর ১০ তারিখ বেসরকারি সংগঠন মিজো জারোলাই পল, ইয়ং মিজো অ্যাসোসিয়েশন, মিজো মিশে ইনখাওন পল, জরাম উপা পল)-এর নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি সংগঠনের শতাধিক যুবক এসে কচুরতলে নির্মাণকাজ শুরু করে দেয়। অসমের নিরাপত্তাকর্মীরা সেদিন তাদের বাধা দিতে গেলে উলটো হামলা করতে উদ্যত হয়। তখন বাধ্য হয়ে অসম পুলিশ ও সিআরপিএফ তাদের লাঠিপেটা করতে শুরু করে। এতে আগ্রাসনকারীরা পালিয়ে দূর থেকে গুলতি ও পাথর ছুঁড়তে থাকে। তখন অসম পুলিশকে গুলি ছুঁড়তে হয়েছিল। এতে কয়েকজন মিজো যুবক জখমও হয়েছিল।
অনুরূপ ঘটনা গতকাল সোমবার হয়েছিল। এদিন মিজোরাম থেকে প্রায় হাজারখানেক হানাদারেরা মিছিল করে হাতে হাতে লাঠি-সোঁটা নিয়ে সীমান্ত টপকে অসমের কচুরতলে আসতে গেলে তাদের কলাশিব (মিজোরাম) জেলার পুলিশ ও সাধারণ প্রশাসন আটকে দিয়েছিল। মিজো পুলিশের সঙ্গে তাদের বহুক্ষণ হাতাহাতি হয়।
উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে শনিবার (১০ মার্চ) রাতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজুর সঙ্গে কথা বলেছিলেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল। এর পরই পরেরদিন সকালে লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট ভূখণ্ড সম্পর্কে দুই রাজ্যের অবস্থান ইত্যাদি সম্পর্কে রিপোর্ট তলব করেছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। মিজেরামের কাছে কেন্দ্রীয় স্বারাষ্ট্রমন্ত্রক জানতে চেয়েছিল, কীসের ভিত্তিতে অসমের ভূমি দখল করতে হামলা করছে রাজ্যের (মিজোরাম) বেসরকারি কতিপয় সংগঠন। সর্বাবস্থায় সীমান্ত এলাকায় শান্তির পরিবেশ গড়ে তুলতে মিজো সরকারকে বলেছিল কেন্দ্র।
এছাড়া হাইলাকান্দি জেলার ভৈরবী এলাকার কচুরতল সীমান্তে শান্তি বজায় রাখার স্বার্থে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতেও কেন্দ্র দুই রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। সে অনুসারে ওই অঞ্চলে সিআরপিফ, আসাম রাইফেলস, ফায়ার ব্রিগেড, জলকামান ‘বরুণ’ মোতায়েন রাখা হয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন