আনন্দমার্গের আবাসন থেকে নিখোঁজ হাইলাকান্দির চার শিশু - Aaj Bikel
আনন্দমার্গের আবাসন থেকে নিখোঁজ হাইলাকান্দির চার শিশু

আনন্দমার্গের আবাসন থেকে নিখোঁজ হাইলাকান্দির চার শিশু

Share This

হাইলাকান্দি   : পড়াশুনার জন্য আনন্দমার্গে পাঠানো চার শিশুর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাকে ঘিরে চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে সমগ্র বরাকে। এ নিয়ে গভীর রহস্য দানা বেঁধেছে। এভাবে শিশু নিখোঁজের নেপথ্যে হাইলাকান্দি জেলাশাসকের কার্যালয়ের এক কর্মীর হাত থাকার অভিযোগ উঠেছে।

ঘটনার সূত্রপাত কাছাড় জেলার উধারবন্দে অবস্থিত আনন্দমার্গের আবাসন থেকে শিশু উদ্ধারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে। সোমবার শিলচর পুলিশ উধারবন্দের আনন্দমার্গের আবাসনে হানা দিয়ে চার শিশুকন্যাকে উদ্ধার করেছিল। এ ব্যাপারে অভিযোগ ছিল, আনন্দমার্গ কর্তৃপক্ষ তাদের শিশুদের সঙ্গে অভিভাবকদের দেখা করতে দিতেন না। শিলচরের এই ঘটনা ঘিরে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে হাইলাকান্দিতে। কারণ, হাইলাকান্দি জেলার কয়েকজন অভিভাবক তাঁদের শিশু নিখোঁজের অভিযোগের সূত্রে পুলিশ অভিযান চালিয়ে এই চারটি শিশুকে উদ্ধার করেছে। যদিও হাইলাকান্দির প্রত্যন্ত এলাকা আনন্দমার্গে পাঠিয়ে নিখোঁজ হওয়া ছয় উপজাতি শিশুর চারজনকে এখনও খোঁজে পায়নি পুলিশ। তবে নিখোঁজ হওয়া শিশুদের খোঁজে বের করার ব্যাপারে তদন্ত আরম্ভ করেছেন হাইলাকান্দির শিশুকল্যাণের কর্মীরা।

মঙ্গলবার হাইলাকান্দি শিশুকল্যাণ কার্যালয়ে ভিড় জমান দক্ষিণ হাইলাকাদির বরুণছড়ার দীনমণি রিয়াং, বক্রজয় রিয়াং প্রমুখ। তাঁরা তাঁদের শিশুদের ফিরিয়ে আনতে চান। এ ব্যাপারে শিশুকল্যাণ আধিকারিক জিতুল বরার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, মাস চারেক আগে দক্ষিণ হাইলাকান্দির ছয় উপজাতি অভিভাবক হাইলাকান্দির শিশুকল্যাণ কার্যালয়ে এসে তাঁদের শিশুরা নিখোঁজ সংক্রান্ত ঘটনার অভিযোগ জানিয়েছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন, তাঁদের সন্তানদের তাঁরা পড়াশুনা করানোর জন্য আনন্দমার্গে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু এখন তাঁদের সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। তাই তাঁদের শিশুদের উদ্ধারের জন্য তাঁরা শিশুকল্যাণ আধিকারিকের হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন। এর পর শিশুকল্যাণ আধিকারিক জিতুল বরা শিলচরের চাইল্ড লাইন এবং চাইড ওয়েলফেয়ার কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেইসঙ্গে তিনি শিলচরের পুলিশকেও এ ব্যাপারে অবগত করেছিলেন।

এরপর সোমবার শিলচরের পার্শ্ববর্তী উধারবন্দের আনন্দমার্গের আবাসন থেকে চারটি শিশুকন্যাকে উদ্ধার করা হয়। চাইল্ড লাইন এবং চাইড ওয়েলফেয়ার কমিটির সাহায্যে পুলিশ এই শিশুকন্যাদের উদ্ধার করে। উদ্ধারকৃত চার শিশুকন্যার মধ্যে দুটি হাইলাকান্দির উপজাতি শিশুও রয়েছে। বাকি দুটি শিশুর একটি আগরতলা এবং অন্যটি কলকাতার বলে জানা গেছে। যদিও হাইলাকান্দি থেকে নিখোঁজ বাকি চার শিশুর হদিশ এখনও মিলেনি বলে জানিয়েছেন শিশুকল্যাণ আধিকারিক জিতুলবাবু। তবে তিনি বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত একজন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে পাওয়া গেছে, যিনি গরিব পরিবারের শিশুদের তাঁদের অভিভাবকের কাছ থেকে পড়াশুনা করাবার কথা বলে আনন্দমার্গে পাঠিয়েছিলেন। এই ব্যক্তি হচ্ছেন বিরদমণি রিয়াং।

 তিনি হাইলাকান্দির জেলাশাসকের কার্যালয়ের একজন চতুর্থশ্রেণির কর্মী। এ ব্যাপারে শিশুকল্যাণ আধিকারিক আরও বলেন, এই ব্যক্তি বিরদামণি নিজে দরিদ্র পরিবারের উপজাতি শিশুদের পড়াশুনা করাবার কথা বলে তাদেরকে নিয়ে এসে আনন্দমার্গের দিতেন। শুধু তা-ই নয়, অভিভাকদের না জানিয়ে তাঁদের শিশুদের বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে দেন বিরদামণি রিয়াং। দক্ষিণ হাইলাকান্দি থেকে যে ছয়টি শিশুকে তিনি নিয়ে গিয়েছিলেন তাদের দুটিকে উধারবন্দের আনন্দমার্গের আবাসনে পাঠালেও বাকি চার শিশুকে অন্যত্র পাঠিয়েছিলেন বিরদামণি। সেখান থেকে এই শিশুদের কলকাতা এবং জামশেদপুর ইত্যাদি এলাকার বিভিন্ন আবাসনে পাঠিয়ে দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে বলে শিশুকল্যাণ আধিকারিক জানান।

ঠিক একইভাবে কয়েকবছর আগে দক্ষিণ হাইলাকান্দি থেকে বেশ কয়েকটি শিশু নিখোঁজ হওয়ার পর তাদেরকেও আনন্দমার্গের আবাসন থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। এবং সে সময়ও এই বিরদামণি রিয়াংকে পুলিশ চাপ দেওয়ার পর তার মাধ্যমেই নিখোঁজ শিশুদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল। তাই এবারও বিরদামণি রিয়াঙের মাধ্যমে নিখোঁজ শিশুদের উদ্ধার করতে চাইছেন শিশুকল্যাণ আধিকারক জিতুল বরা। তবে বিরদামণি রিয়াংকে জিজ্ঞাসাবাদ করে হাইলাকান্দির নিখোঁজ চার শিশুকন্যার ব্যাপারে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে শিশুকল্যাণ আধিকারিক বলেন, হাইলাকান্দির এই শিশুদের নিখোঁজ হওয়ার পেছেনে বিরদামণির হাত রয়েছে বলে তাঁদের ধারণা।

এছাড়াও শিলচরের আনন্দমার্গের সন্যাসিনী অরুন্ধতী বিরদামণির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন। এ ব্যাপারে বিরদামণি রিয়াং বলেন, একজন সমাজসেবক এবং আনন্দমার্গের ভক্ত হিসেবে তিনি দরিদ্র শিশুদের পড়াশুনা করাবার জন্য তাদেরকে আনন্দমার্গে পাঠিয়ে থাকেন। তার কোনও ধরনের কূ-উদ্দেশ্য নেই বলে তিনি সাফ জানান।

কোন মন্তব্য নেই: