কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ, বিধানসভায় গৃহীত ‘সর্বদলীয়’ সিদ্ধান্ত - Aaj Bikel
কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ, বিধানসভায় গৃহীত ‘সর্বদলীয়’ সিদ্ধান্ত

কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ, বিধানসভায় গৃহীত ‘সর্বদলীয়’ সিদ্ধান্ত

Share This

কলকাতা : বিলগ্নীকরণ ও রুগ্ন শিল্প বন্ধ করে দেওয়ার কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাতে ’সর্বদলীয়’ প্রস্তাব গৃহীত হল বিধানসভায়| মঙ্গলবার রাজ্য বিধানসভায় প্রায় এক ঘন্টা বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন দলের নেতারা নিজেদের বক্তব্য পেশ করেন। এ দিন অধিবেশনের দ্বিতীয়ার্ধে রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক প্রস্তাবটির আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, “বেঙ্গল কেমিক্যাল থেকে শুরু করে কেন্দ্র তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা প্রতিটি সংস্থা তুলে দিচ্ছে। এতে কত শ্রমিক বেকার হচ্ছেন, তার চেয়েও বড় কথা, ভবিষ্যতে কাজের বাজার কতটা সঙ্কুচিত হচ্ছে। কেন্দ্রের এই বঞ্ছনার বিরুদ্ধে সবাইকে একযোগে আন্দোলনে নামতে হবে।”

কংগ্রেসের অসিত মিত্র বলেন, “২০০ বছরের ঐতিহ্যের সংস্থা বার্ণ স্ট্যান্ডার্ড এ ভাবে বন্ধ করে দেওয়া যায় না। সাঁতরাগাছি সরকারি প্রেস, অ্যালয় স্টিল প্রভৃতিও লোকসানের অজুহাত দেখিয়ে বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। ডিভিসি-র সদর দফতর কার স্বার্থে, কেন স্থানান্তরিতকরার চেষ্টা হচ্ছে?” বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করে জানতে চান, “আপনাদের সরকারের সঠিক নীতিটা কী? যাঁরা প্রতিবাদ করছেন, তাঁদের কন্ঠরোধের চেষ্টা হচ্ছে। বাংলাকে বঞ্ছিত করার চেষ্টা হচ্ছে। কিছুতেই এ সব চলতে দেওয়া যায় না।” সিপিএমের পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী অধিবেশনে এই আলোচনায় অভিযোগ করেন, “গোটা দুর্গাপুর-আসানসোলের মত শিল্পাঞ্চল শুকিয়ে গিয়েছে। ওই এলাকার এমএএমসি, এফসিআই, অ্যালয় স্টিল প্লান্টের মত সংস্থাগুলিতে একসময় প্রচুর শ্রমিক-কর্মী ছিল। অনেকটা পৈত্রিক সম্পত্তি বেচে দেওয়ার মত করে কেন্দ্র এক এক করে সব বেসরকারি হাতে তুলে দিচ্ছে।” সুজনবাবুর অভিযোগ, “কেন্দ্রের ভাবখানা হচ্ছে, আমি সরকার। আমার হক আছে! যা ইচ্ছে, তাই করব! ভেঙে শেষ করে দাও! আদানিকে ডাকো। অম্বানীকে ডাকো! কিন্তু ১৮১৭-তে তৈরি সেন্ট অ্যাণ্ড্রুজ চার্চ, ১৮২৭-এ তৈরি মনুমেন্ট, বাংলার প্রথম রেলগাড়ি— এ সের নেপথ্যে ছিল বার্ন স্টান্ডার্ড। সেই ঐতিহ্যের সংস্থাকে বাঁচানোর চেষ্টা হবে না? এর প্রতিবাদে সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে একসঙ্গে।”

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এ রাজ্যের কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থাগুলি একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যে অশুভ অবস্থা তৈরি হয়েছে, রাজ্যের শ্রমজীবী মানুষকে তা বোঝাতে হবে। তন্তুজ, ব্রিটানিয়া ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মত রাজ্যের রুগ্ন সংস্থাগুলি যদি ঘুরে দাঁড়াতে পারে, কেন লোকসানে চলা কেন্দ্রের সংস্থাগুলির ভোল পাল্টানো যাবে না? কলকাতা থেকে ডিভিসি-র সদর দফতর সরানোর চেষ্টা হচ্ছে। এর সঙ্গে অঙ্কের লাভ লোকসানের সম্পর্ক কোথায়? এই সংস্থা আমরা কিছুতেই সরাতে দেব না!”

এদিন দিলীপ ঘোষ আলোচনায় বলেন, “নানা সমস্যা আছে, তবে এ সবের নেপথ্যে আছে পূর্ববর্তী সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি। গোড়াতেই বলি, যে প্রস্তাব অধিবেশনে আনা হয়েছে, তার ভাষা নিয়ে আমার আপত্তি আছে! প্রতিটি সরকারের একটা নীতি থাকে। তার ভিত্তিতে গোটা দেশের কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা পর্যায়ক্রমে বন্ধ করা হচ্ছে। রাজ্যের প্রতি চক্রান্তের অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই। যদি কেউ মনে করেন, বছরের পর বছর বিশ্ব ব্যাঙ্কের অথবা বিদেশের ঋণ নিয়ে সরকার চলবে, তা হতে পারে না।” আমলারা সিদ্ধান্ত নেন। তাঁরাই ডুবিয়েছেন বার্ন স্ট্যান্ডার্ডকে। এই মন্তব্য করে এ দিন দিলীপবাবু বলেন, “আমি রেলমন্ত্রীকে বলেছি এই সংস্থার বিষয়টি বিবেচনা করতে। উদ্বৃত্ত জমি বেচে পুরণো ঋণ শোধ করা সম্ভব। কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বিপ্লবের ঝান্ডা না তুলে আসুন, বাংলার স্বার্থে এক হই। তাতে সমাধানের পথ বার হতে পারে। কেন্দ্র-বিরোধী জিগিরের দৃষ্টিভঙ্গী বদলাতে হবে।”

“বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করবেন না! এই মনোভাব পাল্টানো দরকার।” এই মন্তব্য করে আলোচনায় দিলীপবাবু বলেন, ”এ রাজ্যের সরকারের সিদ্ধান্তে নানা সময়ে যে সব সংস্থা বন্ধ হয়ে গিয়েছে, সেগুলিও বিবেচনা করতে হবে! কংগ্রেসের দায়ও নেই। দায়িত্বও নেই! সিপিএম আর কংগ্রেস অস্তিত্বের সঙ্কটে ভুগছে। ঝান্ডাবাজি করে সব কিছু হয় না! রাজ্যের ৩৪ বছরের আর ৭ বছরের পাপ মুছতে হবে আমাদের।” এর পর বিধানসভার অধ্যক্ষ আলোচনার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে কেউ থাকলে হাত তোলার আবেদন করেন। কেউ হাত তুলে আপত্তি না করায় গৃহীত হয় কেন্দ্রবিরোধী সর্বদলীয় প্রস্তাব। পরে দিলীপবাবুকে হাত তুলে প্রতিবাদ না জানানোর কারণ জানতে চাওয়া হয়, তিনি বলেন, “আমি তো বক্তব্যেই আপত্তি জানিয়েছি! হাত তুলে লাভ কী হত? প্রস্তাব তো গৃহীতই হত!”

কোন মন্তব্য নেই: