ত্রিপুরায় অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই তৃণমূল কংগ্রেসের - Aaj Bikel
ত্রিপুরায় অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই তৃণমূল কংগ্রেসের

ত্রিপুরায় অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই তৃণমূল কংগ্রেসের

Share This

আগরতলা  : পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস, ত্রিপুরায় তাদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে নেমেছে। পশ্চিমবঙ্গের বিধায়ক তথা বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত ত্রিপুরার দায়িত্ব নিয়ে ঠায় বসে আছেন। আশা শুধুমাত্র সম্মানজনক অবস্থান পাওয়া। যদিও তৃণমূল কংগ্রেসের কোনও প্রার্থীই জয়ের জন্য লড়াই করছেন না। সে অর্থে চেষ্টাও করছেন না। চেষ্টা করছেন জামানত বাঁচানোর।

ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস ২৪টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থনে উপজাতি ভিত্তিক রাজনৈতিক দল আইএনপিটি এবং এনএসপিটি মিলে আরও ১৬টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। যদিও কোনও কেন্দ্রেই এখনও তৃণমূল কংগ্রেসের দৃষ্টি কাড়ার মতো কোনও প্রচারসজ্জা নেই।

পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস এই রাজ্যে বছর খানেক আগেও ত্রিপুরায় পথঘাট, মাঠ কাঁপিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের পর এই রাজ্যে একাংশ কংগ্রেসিদের মধ্যেও ঘাসফুলের বেশ দোলা লাগে। ছয়জন বিধায়ক তৎকালীন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সুদীপ রায়বর্মনের নেতৃত্বে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন। বিধানসভায় তৃণমূল কংগ্রেস প্রথমবারের মতো ত্রিপুরায় তাঁদের অস্তিত্বের জানান দেয়। সাড়া রাজ্যে ব্যাপক তৎপরতা পরিলক্ষিত হয়েছিল তখন।

কিন্তু এই পরিস্থিতি বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। সুদীপ রায়বর্মনের কার্যকলাপে অসন্তুষ্ট হয়ে যাঁরা ইতিপূর্বে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে শামিল হয়েছিলেন তাঁরাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্তে বেঁকে বসেন এবং সর্বোপরি বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন রতন চক্রবর্তী এবং সুরজিৎ দত্ত।

কিন্তু এখানেই তৃণমূলের অধগতি থেমে থাকেনি। সুদীপ রায়বর্মনের নেতৃত্বে ছয় বিধায়ক তৃণমূল কংগ্রেসে ছেড়ে এক বছরের মাথায় বিজেপিতে যোগ দিয়ে দেন। যদিও তার আগেই তাঁদের দল থেকে বহিষ্কারও করা হয়। পরবর্তী সময়ে তৃণমূল কংগ্রেস ত্রিপুরায় কার্যত বিলুপ্তির মুখে এসে ঠেকে। আর এই অবস্থায় ত্রিপুরায় অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে সেনাপতি করে কলকাতা থেকে সব্যসাচী দত্তকে ত্রিপুরায় পাঠানো হয়েছে। ত্রিপুরায় তৃণমূল কংগ্রেসের বর্তমানে কোনও কমিটি নেই। হাতেগোনা কয়েকজন কর্মকর্তা রয়েছেন। তাঁদের মাধ্যমেই চেষ্টা চলছে অস্তিত্ব রক্ষার।

ইতিমধ্যেই রাজ্য সফর করে গেছেন ববি হাকিম, টলিউডের তারকা দেব, রাজীব চ্যাটার্জি প্রমুখ। বিভিন্ন স্থানে তাঁরা সভা করেছেন, মিছিলেও যোগ দিয়েছেন। কিন্তু মিছিলে লোকসমাগম সম্পর্কে পার্টির নেতারা আশ্বস্ত হতে পারেননি। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য নেতা তথা প্রাক্তন সভাপতি দুলাল দাস বলেন, "ত্রিপুরায় তৃণমূল কংগ্রেস এখন যথেষ্ট দুর্বল। তবে যথাসম্ভব ভালো ফলের চেষ্টা করা হচ্ছে। সরকার গঠন করার মতো কিংবা আসন দখল করার মতো পরিস্থিতিতে এখনও তৃণমূল কংগ্রেস আসতে পারেনি। তবে আগামীদিনে ত্রিপুরার রাজনীতিতে তৃণমূল কংগ্রেস যথেষ্ট ভালো অবস্থান নিতে সক্ষম হবে। রাজ্যে বামবিরোধী হাওয়া তীব্র আকার ধারণ করেছে। কিন্তু জনগণের ইচ্ছা পূরণের মতো শক্তি এখনও রাজ্যে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না। মাত্র কয়েক দিন হল প্রচার শুরু করা সম্ভব হয়েছে।" নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্যই নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে পারবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এদিকে ত্রিপুরার নির্বাচনের জন্য ফান্ড সংগ্রহ করতে গিয়ে কেলেঙ্কারির ফাঁদে জড়িয়ে পড়েছেন বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত। যদিও অভিযোগ খারিজ করেছেন তিনি। এ ব্যাপারে সল্টলেক থানায় একটি মামলাও দায়ের করা হয়েছে৷ রীতিমতো তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপনেরও চেষ্টা করেন ওই বাঙালি ব্যবসায়ী৷ মধুসূদন চক্রবর্তী নামের এই ব্যবসায়ীর রেকর্ড অবশ্য বেশি ভালো নয়৷ প্রতারণার দায়ে ইতিমধ্যে জেলও কেটে এসেছেন৷

ত্রিপুরায় অনেকগুলি বিধানসভায় প্রার্থী দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস৷ উদ্দেশ্য জাতীয় দলের স্বীকৃতিটা ধরে রাখা৷ কিন্তু ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী দিলেও প্রচারের জন্য কোনও টাকা এখন পর্যন্ত তুলে দিতে পারেনি দল৷
জানা গেছে, প্রার্থীদের মাত্র ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ আর দলের এই সিদ্ধান্তে যারপরনাই হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা৷ অনেকেই টাকা নিতে অস্বীকার করেছেন৷

আর এরই মধ্যে ত্রিপুরার নির্বাচনকে সামনে রেখে কলকাতার ব্যবসায়ী থেকে টাকা তোলার অভিযোগ উঠে তৃণমূলের ত্রিপুরা শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা সব্যসাচী দত্তের বিরুদ্ধে৷ যদিও এই ইস্যুতে স্থানীয় তৃণমূলের কোনও মতামত জানা যায়নি৷

কোন মন্তব্য নেই: