ঝাড়্গ্রাম : স্বাড়ম্বরের সাথে ঝাড়গ্রাম ব্লকের ঘৃতখাম গ্রামের দেবী তথা মা কাঁদায়বুড়ির পুজা ঘিরে হাজারো মানুষের ঢল। সোমবার ধুমধামের সঙ্গে গ্রাম দেবতার পুজা,মেলা,লোক সংস্কৃতির নানা বর্নময় অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জঙ্গলমহলে সমাপ্তি হল মকর পরবের উৎসব। আর এদিন থেকেই সুচনা হল কৃষি বর্ষের।মকর জাতের দিনই সাঁওতালি নববর্ষ।
এদিন থেকই শুরু হয় সাকরাত তথা সাঁওতালি বর্ষের ক্যালেন্ডার। এদিন সব মিলিয়ে ঝাড়গ্রাম তথা জঙ্গলমহলের একটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ন উৎসব মুখর দিন। এদিন ভোর থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত আদিবাসী মূলবাসী মানুষ সব আপামর মানুষ মেতে ছিল কৃষি বর্ষের সুচনা,সাওতালি নব বর্ষের দিনটিকে ঘিরে। আরো একটা বছর মানুষের অপেক্ষা থাকবে এই দিন গুলিকে ফিরে পেতে। শনিবার বাউড়ির মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল মকর কেন্দ্রীক তিনদিনের উৎসব।এদিন অ্যাইখান যাত্রা তথা মকর যাতের মধ্য দিয়ে ঘটল উৎসবের সমাপ্তী।
এদিন কৃষি বর্ষের সূচনা দিনটিতে জামিতে হালচারা তথা জমিতে নাঙলের দাগ দেওয়া এক অতি প্রাচীন রীতি। লোক বিশ্বাস এই কৃষি বর্ষের সূচনার দিনটি অতি পবিত্র। এইদিন মেয়ে দেখা থেকে শুরু করে পরিবারের যেকোন শুভ কাজ শুরু হয়। এলাকার মানুষজন সাঁওতালি নব বর্ষের দিনটি অতি ধুমধামের সঙ্গে পালিত হয়। নিজেদের সামর্থ অনুযায়ী প্রত্যেক পরিবার সুন্দরভাবে পা্লন করেন। তবে উৎসবের সমাপ্তী এবং বর্ষ শুরুর দিনটিতে জেলার বিভন্ন জায়গায় গ্রাম দেবতাদের পুজা,তাকে কেন্দ্র করে মেলা এবং লোক সংস্কৃতির যে অনুষ্ঠান গুলি হয় তাকে ঘিরে এক বর্নময় মেলা বসে বিভিন্ন জায়গায়।
এই জঙ্গলমহলের ওই সব এলাকা মাওবাদীদের অতুঁড়ঘর হিসেবে পরিচিত ছিল। এখন শান্তি ফিরেছে মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে এলাকায় ঘোরা ফেরা করতে পারেন। এদিন ঘৃতখাম গ্রাম থকে কিছুটা দূরে নিম এবং বট গাছের নিচে গরাম থানে দেবী কাঁদাইবুড়ির পুজা ঘিরে রাজ্যের বিভন্ন জেলা সহ ঝাড়খন্ড থেকে মানুষের ঢল নামে।তাদের বিশ্বাস মানত তথা মনস্কামনা পূরণ হয় এই দেবী থানে। এখানে নিত্য পুজার পাশাপশি এদিন বিশেষভাবে পুজা হয়।ঘৃতখাম আদর্শ সঙ্ঘ ক্লাব উদ্যোগ নিয়ে পূর্ণর্থীদের বিভন্নভাবে সাহায্য করে। পুজায় আগতদের সরবত খায়িয়ে বা যোকোন ধরনের সাহায্য দিয়ে তারা পাশে দাঁড়ায়। এছাড়াও এদিন জেলার বিভিন্ন ব্লকে স্বাড়ম্বরে পালিত হয়েছ দিনটি। ঘৃতখাম আদর্শ সঙ্ঘ ক্লাবের সম্পাদক পরিমল মাহাত বলেন, আমাদের এই পূজো কয়েকশো বছরের প্রাচীন। বর্তমানে জঙ্গলমহলে শান্তি ফিরে আসায় ভিন্ন রাজ্য থেকেও এখানে পূজো দিতে আসেন মানুষজন। লোক সংস্কৃতির গবেষক সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন“ বহু প্রাচীন কাল থেকে এই বিশ্বাস চলে আসছে এই দিনটি কৃষি বর্ষের সুচনা দিন।লোক বিশ্বাস রয়েছে এই দিনটি খুবই শুভ। তাই যে কোন ভাল কাজ এই দিনটিতে শুরু করার রীতি রয়েছে।”
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন