সোমদত্তা ঘটক: পশ্চিমবঙ্গ, পূর্ব ভারতের একটি রাজ্য। জনসংখ্যার নিরিখে ৯ কোটি ১০ লক্ষ জনসমাগমে এটি ভারতের ৪র্থ সর্বাধিক জনবহুল রাজ্য। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য রাজনৈতিক সক্রিয়তার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। তাছাড়াও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উপস্থিতি এই রাজ্যের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। অর্থনীতির দিক দিয়ে মূলত কৃষিপ্রধান রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ, ভারতের নিট আভ্যন্তরীণ উৎপাদনের মধ্যে পশ্চিম বঙ্গ ষষ্ঠ বৃহত্তম অবদানকারী রাজ্য। পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ মানুষ কৃষিজীবী। রাজ্যের প্রধান খাদ্য-ফসল হল ধান এছাড়াও অন্যান্য খাদ্য-ফসলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ডাল, তৈলবীজ, গম, তামাক, আখ ও আলু। এই অঞ্চলের প্রধান পণ্য-ফসল হল পাট। চা উৎপাদনও বাণিজ্যিকভাবে করা হয়ে থাকে উত্তরবঙ্গে।
পশ্চিমবঙ্গ যেহেতু কৃষি ভিত্তিক রাজ্য এবং কৃষি ভিত্তিক অধিকাংশ কর্মকাণ্ড গ্রামকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে সেহেতু বঙ্গ অর্থনীতির কথা আসলেই সর্ব প্রথম বঙ্গীয় গ্রামীণ অর্থনীতির বিষয়টি মাথায় চলে আসে। একথা অস্বীকারের উপায় নেই যে, কৃষকের উন্নতি ছাড়া দেশের উন্নতি সম্ভব নয়। কৃষক যাতে উৎপাদিত পণ্যের সঠিক মূল্য পান, তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। উন্নত মানের কৃষি কার্য ব্যবস্থা, অত্যাধুনিক সার কীটনাশক, কৃষিজ যন্ত্রপাতির বর্তমান কৃষিব্যবস্থায় ব্যাপক সম্ভার হলেও তাতে কৃষকের লাভ-লোকসান কতটা পরিবর্তন ঘটেছে সে নিয়ে ভ্রুকুটি বহাল।
উন্নত কৃষিশিল্পের যুগে দাঁড়িয়েও সার্বিক পর্যালোচনায় উঠে এসেছে যে এখনো বহু কৃষককে প্রতিবছর ধান পাট বিক্রি করে লোকসান ও ঋণের বোঝা বহন করতে হয়৷ প্রতিবছর তারা প্রতারিত হন এবং একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে তাঁদের অনেকেই ভিড় জমান শহরে। তাছাড়াও বর্তমান কৃষি ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেলেও বঙ্গীয় কৃষি এখনও কিছু সমস্যায় জেরবার হয়ে থাকে প্রায়শই৷ কৃষি সম্পৃক্ত নানা ধরনের সমস্যা রয়েছে।
সমস্যাগুলি একটির সঙ্গে অপরটি সম্পর্কযুক্ত, এ সকল সমস্যার মধ্যে রয়েছে -
১। কৃষকদের পক্ষে কথা বলার কোন সংগঠন নেই।
২। কৃষি উপকরণের দুষ্প্রাপ্য ও দুর্মূল্য৷
৩। কৃষিতে অর্থায়নের সমস্যা৷
৪। অপ্রতুল কৃষি সেবা৷
৫। সাধারণ সম্পদে কৃষকদের প্রবেশাধিকার নেই৷
৬। উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য নেই৷
৭। জলবায়ু ও মানব সৃষ্টির কারণে কৃষি প্রতিবেশ ও প্রাণ বৈচিত্র্য বিপন্ন৷
৮। কৃষি সংশ্লিষ্ট নীতি সমূহের মধ্যে সামঞ্জস্যহীনতা ও বাস্তবায়নে সমন্নয়হীনতা।
ইত্যাদি নানান সমস্যার ফলে কৃষি শিল্পে অত্যাধুনিকতা ও উন্নত কৃষিজ উপাদান থাকা সত্ত্বেও গ্রামীণ অর্থনীতির রূপরেখা পরিবর্তনে বঙ্গীয় গ্রামীণ কৃষি শিল্প এখনও পর্যন্ত সু-ভূমিকা পালন করে উঠতে পারেনি বলা চলে। ফলত গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নের কথা আসলে তার সুদিন বিচারে এখনও কিঞ্চিত অপূর্ণতা রয়েই গিয়েছে৷
তবে একথা অস্বিকর্জ নয় যে বর্তমান সরকার নানাভাবে গ্রাম ও গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নে কাজ করে চলেছে। গ্রামকেই অর্থনৈতিক উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। আর এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সরকার নিত্যনতুন পরিকল্পনা প্রস্তুত করছে৷ এ হেন উদ্যোগ বহাল থাকলে আগত দিন গুলির জন্য গ্রামীণ অর্থনৈতিক উন্নয়ন যে অর্থনৈতিক উন্নয়নে শীর্ষ স্থান অবলম্বন করবে সে প্রত্যাশায় কোনও বিরূপতা নেই। [left-sidebar]
সীমান্ত শহরের হাঁড়ির খবর ~আজ বিকেল ই-পেপার
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন