গুয়াহাটি : শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্পোদ্যোগ ক্ষেত্র-সহ সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্ৰে আমূল পরিবৰ্তনের লক্ষ্যে সৰ্বানন্দ সনোয়াল নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের তৃতীয় তথা দ্বিতীয় পূৰ্ণাঙ্গ বাজেট আজ সোমবার অসম বিধানসভায় দাখিল করেছেন অর্থমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা। শ্রীমদভাগবত গীতার সংস্কৃত শ্লোক-কবিতার মাধ্যমে বাজেট ভাষণ শুরু করে দাৰ্শনিক বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিন, স্বামী বিবেকানন্দ, মহাপুরুষ শ্ৰীমন্ত শংকরদেবের আদৰ্শ ও দৰ্শন, রূপকোঁওর জ্যোতিপ্ৰসাদ আগরওয়ালার উদ্ধৃতি স্মরণ করে ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষের ২১৪৯.০৪ কোটি টাকার ঘাটতি বাজেট দাখিল করেছেন মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব।
মেধার শত্ৰু অজ্ঞানতার বিনাশকারী আলোককে প্রণাম জানিয়ে শ্ৰীমদভাগবতের ‘শুভম করোতি কল্যাণম, আপোগ্যম ধন-সম্পদা। শত্ৰু বুদ্ধি বিনাশায়, দীপজ্যোতি নমস্তুতে।।’ শ্লোকের মাধ্যমে অসম বিধানসভায় বাজেট ভাষণ শুরু করেন অর্থমন্ত্ৰী। এদিন ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষের দাখিলিকৃত ১২৯ পৃষ্ঠার অসমিয়া এবং ১৮৩ পৃষ্ঠার ইংরেজি বাজেটে বিভিন্ন খাতে একত্ৰীকৃত অর্থ থেকে মোট ৯০,২৬৯.৯২ কোটি টাকা ব্যয়ের প্ৰস্তাব তুলে ধরেছেন।
সদনে প্ৰায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী বাজেট ভাষণ অনুযায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবৰ্ষে রাজ্যর একত্ৰীকৃত তহবিলে রাজস্ব খাতে ৭৪,১১৮.৫০ কোটি টাকা এবং কনসলিডেটেড খাতে ১৬,৫৫৪.৯২ কোটি টাকা-সহ মোট ৯০,৬৭৩.৪২ কোটি টাকা প্ৰাপ্তি প্ৰদৰ্শন করা হয়েছে। অন্যদিকে সর্বজনীন তহবিল খাতে ২,৯০,৯১৪.৮৪ কোটি টাকা এবং আনুষঙ্গিক তহবিলের ১০০ কোটি টাকা আদায়ের পর সর্বমোট আদায়ের পরিমাণ হবে ৩,৮১,৬৮৮.২৬ কোটি টাকা।
এর বিপরীতে ২০১৮-১৯ অর্থবৰ্ষে রাজস্ব খাতে ৭১,৩২৯.৩৭ কোটি টাকা এবং মূলধন খাতে ১৮,৯৪০.৫৫ কোটি টাকা নিয়ে রাজ্যের একত্ৰীকৃত তহবিল থেকে মোট ৯০,২৬৯.৯২ কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে অনুমান করা হয়েছে। পাশাপাশি সর্বজনীন খাতের ব্যয় হওয়া ২,৯০,৩১৮.৩৫ কোটি টাকা এবং আনুষঙ্গিক তহবিলের ১০০ কোটি টাকা-সহ এ বছর মোট প্ৰাককলিত ব্যয়ের পরিমাণ হবে ৩,৮০,৬৮৮.২৭ কোটি টাকা। এভাবে বছরের শেষে লেনদেন বাবদ আনুমানিক ৯৯৯.৯৯ কোটি টাকা রেহাই হবে। কিন্তু এর সঙ্গে ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে ৩,১৪৯.০৪ কোটি টাকা ঘাটতির হিসাব মেলালে ২০১৮-১৯ অর্থবৰ্ষের শেষ পর্যন্ত ঘাটতির পরিমাণ হবে ২,১৪৯,০৪ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্ৰী ড. হিমন্তবিশ্ব শৰ্মা সদনে আজ ২০১৮-১৯ অর্থবৰ্ষের যে বাজেট দাখিল করেছেন তাতে কোনও ধরনের নতুন কর আরোপের প্ৰস্তাব রাখা হয়নি। ক্ষুদ্ৰ চা কৃষকদের স্বস্তি প্ৰদান করে কাঁচা পাতার উপকর সম্পূৰ্ণরূপে রেহাই দেওয়া হয়েছে। তদুপরি কৃষি আয়কর আইনের অধীনে রেহাইয়ের সীমা এক লক্ষ টাকা থেকে ২.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এদিক কর বহিৰ্ভূত রাজস্ব হিসাবে ঠিকাদার বা সরবরাহকারীদের টেন্ডার মাশুল বাড়ানো হয়েছে বাজেটে। সে অনুযায়ী ২০ লক্ষ টাকা পৰ্যন্ত টেন্ডারে ক্ষেত্ৰে পূৰ্ববর্তী ৮.২৮ টাকা থেকে ১০০ টাকা এবং ২০ লক্ষ টাকার বেশি টেন্ডারের মাশুল ৫০০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানোর প্ৰস্তাব রাখা হয়েছে।
সমাজের সকল শ্ৰেণিকে নিয়ে সর্বজনীন আর্থিক ব্যবস্থাপনার সংস্কার, সুসংহতকরণ এবং সবলীকরণ, সর্বজনীন পরিকাঠামোর উন্নয়ন, শহরাঞ্চল তথা বৃত্তিমুখী বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়ের মতো উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্ৰতি গুরুত্ব আরোপ, কৃষক, যুবক-যুবতী, মহিলা এবং দিব্যাঙ্গদের কল্যাণসাধন, গ্ৰামোন্নয়ন, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান তথা নিয়োগ সৃষ্টির লক্ষ্যে একত্ৰীকরণ, সম্প্ৰসারণ এবং উত্তরণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বাজেটে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন