হাওড়া : শিবপুর আইআইইএসটি-র সমাবর্তন অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে এবছর সাম্মানিক ‘ডিলিট’ প্রদান করা হল ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে৷ রবিবার সকালে আইআইইএসটিতে আয়োজিত চতুর্থ বার্ষিক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রণববাবুকে এই সম্মানে সম্মানিত করা হয়৷ এছাড়াও এই অনুষ্ঠানে ড: শেখর বসু ও ড: লাজার ম্যাথুকে সাম্মানিক ডক্টর অফ সায়েন্স ডিএসসি প্রদান করা হয়৷
এদিন অনুষ্ঠানে প্রণববাবু বললেন, এই সাম্মানিক ‘ডিলিট’ পেয়ে তিনি কৃতজ্ঞ৷ এর আগে তিনি এখানে এসে ‘ডিলিট’ সম্মান গ্রহণ করার প্রস্তাব পেয়েছিলেন৷ কিন্তু তখন তিনি সাংবিধানিক কারণে সেই প্রস্তাব গ্রহণ করতে পারেননি৷ এবার সেই সম্মান গ্রহণ করতে পেরে তিনি খুশি৷ তিনি আরও বলেন, জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি করতে হবে৷
প্রতিবন্ধকতাকে ওভারকাম করে চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হবে৷ শিক্ষকদের যেমন দায়িত্ব নিতে হবে তেমনই ছাত্রছাত্রীদেরও দায়িত্ব নিতে হবে৷ শুধু নিজের জন্য নয়৷ সমাজের উন্নতির কথা মাথায় রেখে নিজেকে তৈরি করতে ছাত্রছাত্রীদের পরামর্শ দেন তিনি৷ এক্ষেত্রে শিক্ষকদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়৷ এখনও ভারতের অনেক গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছোয়নি৷ বহু মানুষ আজও নিরক্ষর৷ এই অবস্থায় সমাজের উন্নয়নে সকলকে এগিয়ে আসার কথা বলেন তিনি৷
এর আগে ছ’বার ডি. লিট পেয়েছেন প্রণববাবু৷ উল্লেখ্য, গত ১৬ জানুয়ারি তাঁকে ‘সম্মাননাসূচক ডি.লিট’ উপাধিতে ভূষিত
করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১১ সালে উলভারহ্যাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়
তাঁকে সাম্মানিক ডক্টর অফ লেটারস ডিগ্রি দেয়। ২০১২ সালের মার্চ মাসে অসম
বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্বেশ্বরায়া প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সাম্মানিক
ডি. লিট ডিগ্রি দেয়। ২০১৩ সালের ৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে
সাম্মানিক ডক্টরেট অফ ল ডিগ্রি দেয়। ২০১৩ সালের ১৩ মার্চ মরিশাস
বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডক্টর অফ ল সম্মান দেয়৷
শিবপুরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং, সায়েন্স অ্যান্ড
টেকনোলজি-কে সাধারণ (আইআইইএসটি) ইঞ্জিনিয়ারিং, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষা ও
গবেষণার একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটিকে কেন্দ্রীয় সরকার ২০১৪
সালে জাতীয় গুরুত্বের প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ১৮৫৬ সালে
প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রাচীন এই প্রতিষ্ঠানের নাম আইআইইএসটি রাখার আগে ছিল
‘বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি (বেসু)৷ এস কে জোশী কমিটির
সুপারিশ মেনে বেসু-সহ দেশের ৫ টি বিশ্ববিদ্যালয়কে আইআইইএসটি করার প্রস্তাব
দেয় আনন্দ কৃষ্ণন কমিটি৷ তারপর রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা
বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থাকাকালীন মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রককে
বিষয়টি দ্রূত রূপায়ণের অনুরোধ করেন৷
প্রণব মুখোপাধ্যায় একাধিক সম্মান ও পুরস্কার পেয়েছেন। ১৯৮৪ সালে
‘ইউরোমানি’ পত্রিকার সমীক্ষায় তাঁকে ‘বিশ্বের শ্রেষ্ঠ অর্থমন্ত্রী’ বলা
হয়েছিল। ২০১০ সালে বিশ্ব ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের দৈনিক
সংবাদপত্র ‘এমার্জিং মার্কেটস’ তাঁকে 'ফাইনান্স মিনিস্টার অফ দ্য ইয়ার ফর
এশিয়া’ পুরস্কার দিয়েছিল। ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে, ‘দ্য ব্যাঙ্কার’
পত্রিকা তাঁকে "ফাইনান্স মিনিস্টার অফ দ্য ইয়ার্স' সম্মান দিয়েছিল। ভারত
সরকার ২০০৮ সালে তাঁকে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান
‘পদ্মবিভূষণ’ প্রদান করে। ২০১৩ সালের ৫ মার্চ তিনি বাংলাদেশের দ্বিতীয়
সর্বোচ্চ অসামরিক পুরস্কার ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ পান।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন