কলকাতা : লাল দুর্গ যে এভাবে গেরুয়া পতাকায়, জয় রাম ধ্বনিতে ভরে যাবে, কে ভেবেছিলেন?
আদতে তাই হল! রবিবার বেলা দশটায় ই এম বাইপাসের দিক থেকে কয়েক ট্রাক বোঝাই নারী-পুরুষ দলে দলে চললেন রাম নবমীর মিছিলে৷ মুখে তাঁদের রামনাম৷ জোড়া ব্রিজের কাছে সমুদ্রের ঢেউয়ের মত আছড়ে পরল সেই ধ্বনি৷ সংলগ্ন বাজারের লোকেরা অবাক বিস্ময়ে দেখল সেই আবেগ!
অথচ, একসময়ে যাদবপুরকে বলত ‘লাল দুর্গ’৷ কাশিপুরে হেরে যাওয়া সিপিএমের বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে আশ্রয় দিয়ে লালন করার পর মুখ্যমন্ত্রী করেছিল এই যাদবপুর৷ ২০১১-তে পালাবদলের পরে সিপিএম যখন বহু এলাকায় নিছক সাইনবোর্ডে পরিণত হয়েছে, যাদবপুর জিতিয়ে এনে বিধানসভায় সিপিএমের দলনেতা করেছে সুজন চক্রবর্তীকে৷ সেই যাদবপুরে যে এভাবে গেরুয়া পতাকা উড়বে, কে জানত?
রামভক্তদের উল্লাস চিত্রার্পিতের মত দেখলেন এলাকার শিশির দাস৷ এক সময়ের দাপুটে ক্যাডার নিজের দোকান থেকে বেরিয়ে রাস্তায় নেমে কাছ থেকে দেখলেন! শুধু বললেন “বাহ, বাহ!” সার্ভে পার্ক বাজারের দোকানি অরুণ দাস এই সেদিন পর্যন্ত ছিলেন আদ্যন্ত সিপিএম বিরোধী, তৃনমূল কংগ্রেসের পাঁড় সমর্থক৷ এ দিন মিছিলের বহর দেখে খুশি হয়ে ঘোষণাই করে দিলেন, “এঁদের (তৃনমূল) দিন ঘনিয়ে এসেছে!” আর গেরুয়াফেত্তির ভিড় দেখে বাজারের মাংস বিক্রেতা, তৃনমূল কংগ্রেসের সক্রিয় কর্মী বাবাইয়ের রাগত মন্তব্য, “এরা কোথায় থাকে, কে জানে?”
শিয়রে পঞ্চায়েত ভোট৷ রাজ্যে নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখতে তৎপর দুই যুযুধান শিবির তৃণমূল এবং বিজেপি৷ তাই সমস্ত রীতিনীতিকে তুড়ি মেরে রামনবমী পালনে রাজ্যজুড়ে পথে নামল তৃণমূল কর্মীরা৷ শুরু হয় রাজনৈতিক তরজা৷ রামনবমীর মিছিল ঘিরে দিনভর ছিল প্রস্তুতি তুঙ্গে৷ অশান্তি ঠেকাতে কড়া পুলিশি নিরাপত্তা শহরসহ রাজ্যের সর্বত্র৷ যাতে কোনওরকম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়, সেই কারণে তৎপর পুলিশ প্রশাসন৷
পুলিশ সূত্রে খবর, শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রায় ৬০টি মিছিল রাস্তায় বেরোয়৷ এই সমস্ত মিছিলের উপরই ছিল পুলিশের কড়া নজরদারি৷ সাদা পোশাকে ভিড়ের মধ্যেই মিশে ছিল পুলিশ কর্মীরা৷ মিছিলে যদি কেউ অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করেন কিংবা অস্ত্র হাতে মিছিলে হাঁটেন তাহলে তাকে গ্রেফতার করারও হুঁশিয়ারি আগেই দিয়েছিল লালবাজার৷ মিছিলের জন্য অতিরিক্ত ২ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়৷ তবে, এক্ষেত্রে ব্যতিক্রমও রয়েছে৷ চিরাচরিত রীতি মেনে যদি অস্ত্র হাতে যদি কেউ মিছিলে হাঁটেন তাহলে তাকে আটক করা হবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে লালবাজার৷
রামনবমী পালন কিন্তু রাজ্যবাসী খুব একটা টের পেতেন না৷ কিন্তু গত বছরই অস্ত্র মিছিলের জেরেই রামনবমীকে ঘিরে বাংলার ছবিটা বদলে গিয়েছে৷ শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা৷ একদিকে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছেন অস্ত্র ছাড়া মিছিল বের করার৷ অপরদিকে, দিলীপ ঘোষ সরাসরি অস্ত্র মিছিলের ডাক দিয়েছেন৷ কিন্তু এতে সম্প্রীতি নষ্ট হবে এবং অশান্তি হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে৷
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন