ভালোবাসা! যুবকের সুইসাইড নোট এখন পৃথিবীর দীর্ঘতম প্রেমপত্র - Aaj Bikel
ভালোবাসা! যুবকের সুইসাইড নোট এখন পৃথিবীর দীর্ঘতম প্রেমপত্র

ভালোবাসা! যুবকের সুইসাইড নোট এখন পৃথিবীর দীর্ঘতম প্রেমপত্র

Share This

আসানসোল: পারমিতাকে ভালো বেসেছিলেন অনুপম। কিন্তু চার-হাত এক হয়নি। তখন পৃথিবীটা শূন্য মনে হয়েছিল। মাথায় এসেছিল নিজেকে শেষ করার কথা। কিন্তু প্রিয়তমাকে যে কথাগুলো বলা হল না, তার কী হবে ? সেই ভাবনা থেকেই চিঠি লিখতে বসেন অনুপম ঘোষাল। সেটা ২০০০ সাল। টানা ৭২ ঘণ্টা খাওয়া নেই, ঘুম নেই লিখেই গিয়েছেন, লিখেই গিয়েছেন। আত্মহত্যা করা হয়নি। বরং ভালবাসার প্রিয়তমাকে না-পাওয়ার যন্ত্রণা কলমের ডগায় এসে জড়ো হয়েছিল। ঝরনার মতো পাতায় পাতায় ঝরে পড়েছে তারা।


ভালোবাসার শুশ্রুষার মতো হয়ে যায় না-ভালোবাসার অসুখ কালে। মৃত্যুর মতো পরাজয়ের টানেল থেকেও অনুপম ফিরে আসে জীবনের আনন্দে। এর পরে লেখাটা নেশা হয়ে উঠল। নিমন্ত্রণ বাড়ির খাবার টেবিলে পাতার রোল কাগজে চলতে লাগল এক আশ্চর্য কথামালা। গানে, কবিতায়, কথায় সৃষ্টি হয় ৩২৭ ফুট দৈর্ঘ্যের এক অনন্য প্রেমপত্র। একদিন সেই বার্তা তিনি পৌঁছে দেন সুইডেনে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের দফতরে। বিশ্বের দীর্ঘতম প্রেমপত্রের শিরোপার আবেদন পেয়ে প্রাপ্তি স্বীকারের চিঠি পেয়েছেন ইতিমধ্যেই। অনুপম ঘোষাল বর্তমানে অসুস্থ, কলকাতায় নার্ভের চিকিৎসা চলছে তাঁর। অনুপম বলেন প্রেমে প্রত্যাক্ষিত হয়ে আত্মহত্যার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু মনে জমে ছিল অনেক কথা।

এত কথা, এত কথা, সেসবের কি হবে। না বলতে পারা সেইসব কথা জানিয়ে যেতে হবে পারমিতাকে। তাই ভোজবাড়ি আড়াই কেজির সস্তা রোল পেপারের ওপর শুরু করেছিলাম পারমিতাকে উদ্দ্যেশ্য করে জীবন যন্ত্রণার কথামালা। লিখতে থাকা সেই চিঠি চাওয়া পাওয়া, জীবনদর্শণ মিলিয়ে জন্ম দেয় এক সাহিত্যের। অনুপম জানান শুধু ভালোবাসার কথা নয় পরবর্তীকালে বদলে যেতে থাকা শহর আসানসোলের ইতিহাস ও বর্তমান সময় নিয়েও নথিবদ্ধ করি। পারমিতাকে উদ্দেশ্য করে আটটি স্বরচিত গানও ওই চিঠির রয়েছে। তিনি বলেন ২০০৭ সালে তাঁর বিয়ে হয় কলকাতার সুনন্দার সঙ্গে। তাঁর স্ত্রীই দৌঁড়ঝাপ করে দীর্ঘপ্রেম পত্রটিকে বইয়ের আকারে প্রকশিত করতে সাহায্য করেন।

আসানসোলের মানুষ অনুপমকে ‘‘মিস্টার ভ্যালেন্টাইন’’ বলেও ডাকেন। কিন্তু মিস্টার ভ্যালেন্টাইন এখন মুশকিলে পড়েছেন তাঁর ওই চিঠির সংরক্ষণ নিয়ে। সস্তার কাগজ ঝরে ঝরে পড়ছে, ইদুরে কাঁটছে। তবে ইতিমধ্যেই বই হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর চিঠি। সেখানে লেখা গান নিয়ে অডিও ক্যাসেটও তৈরি হয়েছে। তাঁর আবেদন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। তিনি যদি অমর সৃষ্টির সংরক্ষণের দায়িত্ব নেন তবে বিশ্বের দীর্ঘতম প্রেমপত্রটি নষ্ট হওয়ার থেকে বেঁচে যাবে। ভালোবাসার দিনে অনুপমের বার্তা প্রেমে প্রত্যাখান হয়ে আত্মহত্যা নয় বা অ্যাসিড বাল্ব হানা নয় বরং তৈরি হোক অমর সৃষ্টির। তবেই হবে প্রকৃত প্রেমের মূল্যায়ন।

কোন মন্তব্য নেই: