কলকাতা : তুলনামূলক ভাবে সাধারণ সরকারি বাস কমছে রাস্তায়। কম ভাড়ার বাসের অভাবে নিত্যযাত্রীদের হয়রানি বাড়ছে। সাধারণ বাস না বাড়িয়ে দফায় দফায় এসি বাস কিনে পরিস্থিতি সামলাতে চাইছে রাজ্য সরকার। তাতে যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য বাড়লেও সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। অনেক বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের। এতে সঙ্কটে পড়ছেন যাত্রীদের একটা বড় অংশ।
শহরের যাত্রী পরিবহণের অবয়ব বদলাতে রাজ্য সরকার ২০১৫-তে জেএনএনইউআরএম প্রকল্পের হাত ধরে সিএসটিসিকে দিয়ে কলকাতার পথে ২৩৪টি এসি বাস নামায়৷ বাসের ভাড়া না বাড়িয়েও চড়া ভাড়ায় বাসে চড়তে বাধ্য করানোর পথে হাঁটতে শুরু করে রাজ্য সরকার। অভিযোগ, সাধারণ বা এসি বাস পথে নামিয়ে এখন দ্বিচারিতা নীতি নিয়েছে রাজ্যের পরিবহন দফতর। জেএনএনআরইউএম প্রকল্পে রাজ্যের পরিবহন এর পর ৬৩২টি নতুন বাস কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। এর মধ্যে ২৩৪টি বাসই শীততাপ নিয়ন্ত্রিত। তার মধ্যেও আবার ৬৩টি বাস প্রিমিয়াম এসি। এই প্রিমিয়াম বাসের এক, একটির দাম ১কোটি ১লক্ষ টাকা।
অভিযোগ, যে টাকায় সাধারণ বাস কিনে গণপরিবহনে সাহায্য হতো তা না করে পরিবহন দফতর বিশাল অঙ্কের টাকা খরচ করে বিলাসবহুল বাস কিনছে। স্বাভাবিকভাবেই কলকাতা ও শহরতলির মধ্যে এই বাসে দ্বিগুণ, তিনগুণ ভাড়া দিয়েই যাত্রীদের উঠতে হচ্ছে।
এসি বাস চালু হওয়া নিয়ে পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘এটি একটি রুটিন প্রক্রিয়া। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে চাহিদা মতো এসি বাস চালু করবে পরিবহণ দফতর। যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্য এবং যাত্রী-সুরক্ষাই সরকারের লক্ষ্য।’’
ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির জন্য এমনিতেই বাস ভাড়া বাড়ানোর দাবি করে আসছে বেসরকারী পরিবহনের সঙ্গে যুক্ত মালিকরা। সরকার ভাড়া না বাড়ানোয় ক্রমশ শহরের পথ থেকে কমছে বাস। একই হাল সরকারী বাসেরও। এখন ভাড়া না বাড়িয়ে বেশি ভাড়ার বাসে চাপতে নিত্যযাত্রীদের বাধ্য করছে রাজ্য সরকার।
পরিবহন দফতরের এক কর্তা অবশ্য দাবি করেন, ‘‘বাইপাস থেকে ট্যাক্সি নিয়ে নবান্নে আসতে গেলে আড়াইশো টাকা খরচ হয়ে যাবে। সেখানে এসি বাসে চড়ে নবান্নে আসতে ৩০-৩৫টাকা খরচ হবে। যাত্রীদের অনেকেই এই বাস পছন্দ করছেন।’’ কিন্তু ট্যাক্সির সওয়ারির পছন্দ ও সাধ্যের মধ্যে হতে পারে এসি বাস। তার বাইরেও যে সাধারণ যাত্রীরা আছেন তাদের তো সমস্যায় পড়তে হবে? পরিবহন কর্তার কথায়, ‘‘আমরা সরকারী নীতি অনুযায়ী কাজ করি। এক্ষেত্রে সরকার যা চাইছে তাই হবে।’’
সিটু নেতা রামপ্রসাদ সেনগুপ্ত এই প্রতিবেদককে বলেন, “এসি বাসের চড়া ভাড়া সত্বেও মাসে সিএসটিসি-র টিকিট বাবদ আয় হচ্ছে বড়জোর ৯ কোটি টাকা। সেখানে তেল-বাবদ আয় বেড়েছে অনেকটাই। মাসে এই খাতে খরচ হচ্ছে সাড়ে সাত কোটি টাকার ওপর। এসি বাসের তেল এবং রক্ষনাবেক্ষনের খরচ সাধারণ বাসের চেয়ে অনেক বেশি।”
এদিকে, গরমে নাজেহাল নিত্যযাত্রীদের সুবিধার্থে দত্তবাগান থেকে চালু হতে চলেছে দু’টি এসি বাস। রাজ্য পরিবহণ দফতর বাসগুলি চালাবে। সব ঠিক থাকলে এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বাস পরিষেবা চালু হবে। কলকাতা পুরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শান্তনু সেন বলেন, ‘‘দত্তবাগানে সরকারি রেন্টাল, বেলগাছিয়া ভিলার মতো হাউজিংয়ের বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। বাসগুলি ভালভাবে শীঘ্রই আরও এসি বাস নামানো হবে। বাড়ানো হবে রুটও।’’
দক্ষিণ কলকাতা থেকে বিভিন্ন রুটে প্রচুর এসি বাস রয়েছে। সেই তুলনায় উত্তর কলকাতা থেকে এসি বাসের সংখ্যা কিছুটা হলেও কম। শ্যামবাজার-পাইকপাড়া থেকে বি টি রোড হয়ে বেশ কিছু এসি বাস চলে। এয়ারপোর্ট, ভিআইপি রোডের দিকেও শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বাস রয়েছে। কিন্তু যশোর রোড ধরে লেকটাউন, পাতিপুকুর, দত্তবাগান হয়ে শ্যামবাজার পর্যন্ত এসি বাসের দেখা মেলে না। ওই অঞ্চলের বাসিন্দারা বহুদিন ধরেই শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বাসের জন্য দাবিতে সরব।
এক নম্বর বরো’র চেয়ারম্যান তরুণ সাহা বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে পরিবহণমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি অনুমতি দিয়েছেন। দত্তবাগান থেকে সাঁতরাগাছি, এবং দত্তবাগান থেকে ডালাহৌসি আপাতত দু’টি রুটে ওই বাস পরিষেবা চালু হবে।’’ সূত্রের খবর, সাত থেকে আটটি বাস এখন রাস্তায় নামানো হবে। সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টার মধ্যে ১৫ থেকে ২০ মিনিট অন্তর ওই বাসগুলি চলবে।
পরিবহণ আধিকারিকদের একাংশের আশা, এসি বাসের প্রতি যাত্রীদের আগ্রহ থাকে। তাই নতুন রুটে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস চালু হলে আয় বাড়বে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন