আগরতলা : রাজ্যে সর্বত্র পানীয় জলের সরবরাহ সুনিশ্চিত করার বিষয়টিকে কেন্দ্র করে পরিকল্পনা এবং তা রূপায়ণে রাজ্য সরকারের চলতি সমস্যা নিয়ে বিধানসভায় মঙ্গলবার দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। বিধানসভায় বিষয়টি উত্থাপন করেন বিজেপি বিধায়ক বিশ্ববন্ধু সেন।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে রাজ্যের পানীয় জল বিষয়ক মন্ত্রী সুদীপ রায়বর্মন বলেন, "রাজ্যের পাহাড় সমতল সর্বত্র বসবাসকারীদের জন্য নিয়মিত পরিস্রুত পানীয় জলের সুযোগ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে পূর্ত দফতর কাজ করে চলছে। পঞ্চায়েত দফতরের সঙ্গে যৌথ সমীক্ষা অনুযায়ী রাজ্যে গ্রামীণ এলাকায় মোট ৮,৭২৩টি পাড়া আছে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত সকল উৎস দ্বারা সরবরাহকৃত পানীয় জলের সমীক্ষায় পরিমাণগত ভাবে ৬,১১৩টি পাড়া পুরোপুরি পানীয় জল সরবরাহের আওতাধীন, ২,৫৯২টি আংশিক আওতাধীন এবং ১৮টি পাড়া 'স্লিপ বেক' পাড়াতে পরিণত হয়েছে।"
তিনি জানান, জলের উৎস শুকিয়ে যাওয়ার কারণে এই ১৮টি পাড়া স্লিপ বেক-এ রূপান্তরিত হয়েছে যেখানে জনপ্রতি ১০ লিটারের নীচে পানীয় জল উপলব্ধ আছে। তিনি বলেন, "দফতর অতি দ্রুততার সঙ্গে এই পাড়াগুলোতে জল সরবরাহের আওতায় আনার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি তিনি এ-ও জানান, বর্তমানে রাজ্যে কোনও পাড়াই জল সরবরাহের আওতার বাইরে নেই।"
তিনি বলেন, "রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় ১,৬৯৬টি গভীর নলকূপ আছে। ২,৮৬০টি ছোট ব্যাসের গভীর নলকূপ, ৩৪টি ভূ-পৃষ্ঠস্থ জল পরিশোধন প্রকল্প, ২৮টি ভূ-গর্ভস্থ জল পরিশোধন প্রকল্প, ২৩৭টি ইনোভেটিভ প্রকল্প, ৫০টি উচ্চ জলাধারের মাধ্যমে পানীয় জল সরবরাহ করা হয়। জলের গুণগত মান বাড়ানোর জন্য গ্রামীণ নলকূপের সঙ্গে যুক্ত করে ৭৭৬টি লৌহদূরীকরণ প্রকল্প চালু অবস্থায় আছে। এই সব প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকায় ৭৭ শতাংশ লোক পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানীয় জল পেয়ে থাকে।"
তিনি জানান, রাজ্যের পুরনিগম, পৌরসভা ও নগর পঞ্চায়েত এলাকায় সর্বত্রই পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানীয় জল সরবরাহ করা হয়ে থাকে। মোহনপুর, বিশালগড়, সাব্রুম ছাড়া সবগুলি শহর এলাকায় ভূ-পৃষ্ঠস্থ জল পরিশোধন প্রকল্পের মাধ্যমে পানীয় জল সরবরাহ করা হয়ে থাকে। তিনি আশা প্রকাশ করছেন, বিশালগড়ের ভূ-পৃষ্ঠস্থ জল পরিশোধন প্রকল্পের কাজ খুব শীঘ্রই শেষ হবে। তাছাড়া সাব্রুমে ভূ-গর্ভস্থ জল পরিশোধন প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে বলে জানান পানীয় জল বিষয়ক মন্ত্রী সুদীপ রায়বর্মন।
তিনি বলেন, "গ্রামাঞ্চলে শুখা মরশুমে ভূ-গর্ভস্থ জলস্তর নেমে যাওয়ার ফলে কিছু কিছু স্পট সোর্স শুকিয়ে যায় বা খারাপ হয়ে যায়। এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে দফতর সেগুলি নিজেরা বা ব্লকের মাধ্যমে সারাই করার ব্যবস্থা রেখেছে। জলস্তর নেমে যাওয়ার ফলে যে সব পাড়ায় স্থানীয় উৎস কার্যকরী রাখা সম্ভব হয় না সেইসব এলাকায় ট্যাংকারের মাধ্যমে পানীয় জলের যোগান দেওয়া হয়।"
তিনি জানান, দফতর রাজ্যের গ্রামীণ এলাকায় সব পাড়ায় পাইপ লাইনের মাধ্যমে জল সরবরাহ করার জন্য বদ্ধপরিকর। সে অনুযায়ী আংশিকভাবে জল সরবরাহকৃত ২,৫৯২টি এবং ১৮টি 'স্লিপ বেক পাড়ায় সম্পূর্ণভাবে জল সরবরাহের আওতাধীন করার জন্য পঞ্চবর্ষীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করা চলছে।
তিনি আরও জানান, এই পরিকল্পনা অনুসারে ত্রিপুরা রাজ্যের বেশ কিছু এলাকায় ভূ-গর্ভস্থ জলস্তর গভীরে থাকায় নরমাল রিং দিয়ে খনন করে পানীয় জল পাওয়া যায় না। ওই সমস্ত জায়গাগুলিতে হাইপাওয়ার রিং দিয়ে ডিপ-টিউবওয়েল খননের কাজ চলছে।
তিনি জানান, রাজ্যে এ পর্যন্ত ৩৫০টি স্থানে ডিপ-ড্রিলিং-এর মাধ্যমে গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে এবং বেশ কিছু জায়গায় কাজ এগিয়ে চলছে। পানীয়জল মন্ত্রী বলেন, "রাজ্যের গ্রামীণ এলাকায় সব পাড়ায় পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানীয় জল সরবরাহ করার জন্য পঞ্চবার্ষিকী কার্যকরী পরিকল্পনা গ্রহণ করে ভারত সরকারের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে ১,২৪৯টি গভীর নলকূপ, ১,১০৯টি ছোট ব্যাসের গভীর নলকূপ, ২৮টি ভূ-পৃষ্ঠস্থ জল পরিশোধন প্রকল্প, ৮২টি ইনোভেটিভ প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। তিনি জানান, এই সব প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে মোট পাইপ লাইনের দৈর্ঘ্য প্রায় ৭,২৬০.০০ কিমি লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, "আগামী অর্থবর্ষে অর্থাৎ ২০১৮-১৯ সালে ১৮০টি ডিপ-টিউবওয়েল খনন, ১৮০টি ডিপ-টিউবওয়েল চালু করা, ৪৪টি এসবিডিটিডব্লিউ, সাতটি সারফেইস ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, ৬০টি আইআরপি, ৫০টি গ্রাউন্ড ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, ১৬টি ইনোভেটিভ প্রকল্প, ১,৫২০.০০ কিমি পাইপ লাইন সম্প্রসারণ করার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে।
মন্ত্রী আরও জানান, রাজ্য সরকার বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করে দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে পানীয় জল সরবরাহ করার লক্ষ্যে শীঘ্রই প্রকল্প হাতে নেবে এবং রাজ্যের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে 'রিভার্স অসমোসিস' প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জল পরিশোধন করে ওয়াটার এটিএম-এর স্থাপন করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, "রাজ্যের স্বশাসিত জেলা পরিষদ এলাকায় গভীর নলকূপ খনন করার জন্য নীতি আয়োগ থেকে এই অর্থবর্ষে ৫০ কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এই অর্থ দিয়ে এখন পর্যন্ত ৬০টি গভীর নলকূপ খনন এবং চালু করার কাজ এগিয়ে চলছে। এছাড়া আরও ১২টি স্থানে গভীর নলকূপ খননের কাজ এগিয়ে চলছে। বিএডিপি প্রকল্প থেকেও পাঁচটি গভীর নলকূপ খননও চালু করার কাজ এগিয়ে চলছে।"
সবশেষে তিনি বলেন, সরকার পানীয়জল সরবরাহকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এজন্য রাজ্যে সকল পাড়ায় পাইপলাইনের মাধ্যমে পানীয়জল সরবরাহ করার জন্য সরকার বিশেষ পঞ্চবর্ষীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে এবং তা রূপায়ণের জন্য সব ব্যবস্থা হাতে নিয়েছে। জনপ্রতিনিধি, জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি, গ্রাম পঞ্চায়েত, ভিলেজ কমিটি, ত্রিপুরা স্বশাসিত জেলা পরিষদ — সকলের সহযোগিতায় তাঁর দফতর জল সরবরাহের কাজ করে চলছে বলে পানীয় জল বিষয়ক মন্ত্রী সুদীপ রায়বর্মন জানান।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন