বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর ভাষাতত্বে আপত্তি ভাষাবিদের - Aaj Bikel
বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর ভাষাতত্বে আপত্তি ভাষাবিদের

বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর ভাষাতত্বে আপত্তি ভাষাবিদের

Share This

কলকাতা  : বিধানসভায় ভাষা নিয়ে বলতে গিয়ে গুরুমুখী এবং সাওতালি ভাষার গুরুত্বের কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দাবি করেছেন, প্রতিটি ভাষাকে সম্মান করতে হবে। কিন্তু এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভাষাবিদ তথা প্রাক্তন উপাচার্য পবিত্র সরকার।

আঞ্চলিক ভাষার প্রসারে কীভাবে তাঁরা সক্রিয়, তার আলোচনা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভা অধিবেশনে জানান, “রাজ্যের কলেজ সার্ভিস কমিশনে সাঁওতালি ভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। অধ্যাপক নিয়োগ হয়েছে ওই ভাষায়। ৪২টি কলেজ ও ৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হচ্ছে এই ভাষা। এ ছাড়াও, সাঁওতালি ও অলচিকি ভাষায় শীঘ্রই প্রকাশ করা হবে 'পশ্চিমবঙ্গ’ পত্রিকা। এই ভাষাচর্চার জন্য প্রতিষ্ঠান হয়েছে। অভিধান হয়েছে। ২০১৫ থেকে ‘সেট’ পরীক্ষায় উর্দূ ভাষাকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। কুরুক ভাষার প্রসারের জন্য দক্ষিণ দিনাজপুর, আলিপুরদুয়ার, হুগলি, বর্ধমান জেলায় ব্যবস্থা হয়েছে।” গুরুমুখী এবং সাঁওতালি ভাষার গুরুত্বের কথাও বলেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র সরকার ‘হিন্দুস্থান সমাচার’-কে বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী জানেন না, অলচিকি আর গুরুমুখী ভাষা নয়। এ দুটি যথাক্রমে সাঁওতালি ও পঞ্জাবি ভাষার লিপি।”

কামতাপুরি, রাজবংশী এবং কুড়মালি ভাষাকে রাজ্যের সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বুধবার বিধানসভায় পাশ হয় ‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল অফিসিয়াল ল্যাঙ্গুয়েজ (সেকেন্ড অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল, ২০১৮’। ওই বিলে কামতাপুরি এবং রাজবংশীকে আলাদা ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ায় আপত্তি জানান বিরোধীরা। তার জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমার ভাষাকে ভালবাসলে অন্যের ভাষাকে অসম্মান করাটা দৃষ্টিকটূ।’’

এ প্রসঙ্গে পবিত্র সরকারের ব্যাখ্যা, “রাজবংশী ভাষা নয়। ওটা বাংলার একটা উপভাষা বা ডায়ালেক্ট। আর, কুড়মালিরা ওদের কথাকে ভাষা বলে দাবি করলেও তাঁরা নিজেরাই জানেন না, বিষয়টা কী? মধ্যবিত্তরা যখন দাবি করে, তখন রাজনৈতিক বিচারে এক একটা জনজাতিকে খুশি করতে সরকার উপভাষাকে ভাষার স্বীকৃতি দিয়ে দেয়। দেখুন না, গোর্খালি আর নেপালি একই ভাষা। অথচ, গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের সময়ে সরকার গোর্খা ভাষাকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা জানিয়েছে। কেবল এ দেশে নয়, বিদেশেও এমন হয়েছে! নরওয়ে এবং সুইডেনের ভাষা এক কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক আছে।

মুখ্যমন্ত্রী জানান, “কামতাপুরী ভাষার ব্যাপারে সাত জনের একটা বিশেষজ্ঞ কমিটি করেছিলাম। গত ৩১ জানুয়ারি তারা রিপোর্ট পেশ করেছে। রিপোর্টে সুপারিশ করা হয়েছে, এটিকে সরকারি ভাষা করা যেতে পারে। রাজবংশী ভাষার উন্নয়ণের পথ ও তার রূপায়ণ খতিয়ে দেখতে ২০১৭-তে কমিটি তৈরি করেছিলাম। মানভূম কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন ওদের ভাষা নিয়ে কাজ করছে।” এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী নৃসিংহ প্রসাদ ভাদুড়ির সুপারিশের কথা উল্লেখ করেন অধিবেশনে।

পবিত্র সরকার অবশ্য এই প্রতিবেদকের কাছে দাবি করেন, “আমি সারা জীবন ভাষা নিয়ে চর্চ করেছি| নৃসিংহ প্রসাদ ভাদুড়িকে আমি তো ভাষাবিদ বলে মনেই করি না! তবে, রাষ্ট্র যদি কোনও উপভাষাকে ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দেয়, আমি বলার কে?”


দার্জিলিংয়ের ১১টি জনজাতির বিশেষ স্বীকৃতি দিতে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রাজ্য আবেদন করেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ কথা জানিয়ে বলেছেন, “এই সঙ্গে কূর্মিদের বিশেষ মর্যাদা দিতেও আবেদন করেছি কেন্দ্রকে।”

পশ্চিমবঙ্গে কূর্মিদের সংখ্যা প্রায় ২০ লক্ষ। রাজ্য বিধানসভায় এই হিসেব দাখিল করে মুখ্যমন্ত্রী জানান, “ওদের জন্য এ রাজ্যে উন্নয়ন পর্ষদ তৈরি করেছি।

কোন মন্তব্য নেই: