নয়াদিল্লি : পিএনবির পর এবার জালিয়াতি ওরিয়েন্টাল ব্যাঙ্কে | নীরব মোদীর জালিয়াতির মাঝেই প্রকাশ্যে এল ওরিয়েন্টাল ব্যাঙ্ক অফ কমার্স-এ নিয়ে প্রায় ৩৮৯.৮৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে পালিয়েছে অপর এক হীরে ব্যবসায়ী। এই ঘটনায় অভিযোগ উঠেছে দিল্লির গহনা ব্যবসায়ী সভ্য শেঠ ও রীতা শেঠের বিরুদ্ধে। এই প্রতারণায় সিবিআইয়ের কাঠগড়ায় রয়েছে দ্বারকা দাস শেঠ ইন্টারন্যাশনাল নামে এক সংস্থা।
২০০৭ সালে ঘটনার সূত্রপাত। ২০০৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে ওবিসি থেকে লেটার অফ আন্ডারস্ট্যান্ডিং ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের ধার নিয়েছিলেন অভিযুক্ত হীরে ব্যবসায়ী। পরে সেই ধারের অঙ্কটি বেড়ে দাঁড়ায় ৩৮৯ কোটি টাকা। এরপর ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ দেখে এলওইউ ব্যবহার করে বিভিন্ন ক্রেডিটরদের সোনা এবং দামি পাথরের দাম মেটাচ্ছে ওই হীরে ব্যবসায়ীর সংস্থা। এদিকে আবার জাল লেনদেন-এর নথি তৈরি করে প্রচুর সোনা ও টাকাও বাইরে পাচার হয়ে যাচ্ছে, এমন তথ্যও আসে ওবিসির হাতে। এরপরই এফআইআর করে ব্যাঙ্ক। বর্তমানে সেটি সিবিআইয়ের অধীনে রয়েছে। ব্যাঙ্ক অভিযোগ জানানোর ছ মাস বাদে সিবিআই ওই সংস্থা, সভ্য সেঠ, রীতা শেঠ, কৃষ্ণা কুমার সিং, রবি সিং এবং সংস্থার অন্য ডিরেক্টরদের এই মামলায় অভিযুক্ত করে। ওই সংস্থা ছাড়াও, দ্বারকা দাস শেঠ এসইজেড ইনকর্পোরেশনের বিরুদ্ধেও মামলা শুরু হয়েছে।
দিল্লির ঘটনায় ইতিমধ্যেই দ্বারকা দাস শেঠ ইন্টারন্যাশনাল নামে ওই সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে সিবিআই। তদন্তকারী আধিকারিকরা জানতে পেরেছেন, এফএলসি-র মাধ্যমে বিদেশ থেকে গহনা কেনার নাম করে দফায় দফায় ৩৯০ কোটি টাকা ধার নেন সভ্য শেঠ ও রীতা শেঠ। কিন্তু তার পর থেকে নানা অছিলায় সেই টাকা ফেরাতে অস্বীকার করেন তাঁরা। বারবার ব্যাঙ্কের তরফে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও, তাদের কোনও হদিশ মেলেনি। এরপরই সিবিআইয়ের দ্বারস্থ হয় ব্যাঙ্ক। তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, দিল্লির পাঞ্জাবি বাগের বাড়িত থেকে ১০ মাস আগে পালিয়েছেন তাঁরা। তবে, দুবাইতে তাদের সংস্থার একটি শাখার খোঁজ পেয়েছে সিবিআই। সেই সূত্র ধরেই শুরু হয়েছে তদন্ত।
প্রসঙ্গত, চলতি মাসেই পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কে প্রায় ১১,৪০০ কোটি টাকার জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে হিরে ব্যবসায়ী নীরব মোদী ও তাঁর মামা মেহুল চোকসির বিরুদ্ধে। মুম্বইয়ে পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের ব্র্যাড রোড শাখা থেকে সুইফ্ট পদ্ধতির মাধ্যমে প্রায় ১১,৪০০ কোটি টাকা ঋণ নেন ব্যবসায়ী নীরব মোদী। চলতি মাসে তদন্তে নেমে সিবিআই ও ইডি জানতে পারে ঋণ নেওয়ার গোটা পদ্ধতিটিই ত্রুটিপূর্ণ ছিল। আর তাতে জড়িয়ে ছিলেন ব্যাঙ্কের ওই শাখারই দুই আধিকারিক। এরপরই সামনে আসে ভারতীয় ব্যাঙ্কিং পরিষেবায় এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বড় দুর্নীতি। ইতিমধ্যেই এই মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে ১২ জনকে। ধৃতদের মধ্যে যেমন রয়েছে ব্যাঙ্কের অভিযুক্ত দুই আধিকারিক, তেমনই রয়েছে নীরব মোদীর সংস্থার প্রথম সারির আধাকারিকরা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন