‘কেন্দ্রে মোদীর সরকার, বিজ্ঞাপন-সর্বস্ব সরকার’ - Aaj Bikel
‘কেন্দ্রে মোদীর সরকার,  বিজ্ঞাপন-সর্বস্ব সরকার’

‘কেন্দ্রে মোদীর সরকার, বিজ্ঞাপন-সর্বস্ব সরকার’

Share This

 

গুয়াহাটি: বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্ৰায় সরকারকে টেলিভিশন এবং বিজ্ঞাপন সর্বস্ব সরকার বলে আখ্যা দিয়েছেন কংগ্ৰেসের সর্বভারতীয় নেতা তথা রাজ্যসভায় বিরোধী দলপতি গুলাম নবি আজাদ। আজ রবিবার গুয়াহাটিতে দলের প্রদেশ দফতর রাজীব ভবনে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে বরিষ্ঠ কংগ্ৰেস নেতা বলেন, কেন্দ্রের মোদী সরকার একনায়কতন্ত্রের কবলে পড়েছে। স্বৈরতান্ত্রিক শাসন চালাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী।


নবির অভিযোগ, গণতন্ত্ৰের চতুৰ্থ স্তম্ভ সংবাদমাধ্যম, বিশেষ করে বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যমের স্বাতন্ত্ৰ্যের ওপরও হস্তক্ষেপ করছেন নরেন্দ্র মোদী। এখন থেকে সরকারের শ্ৰুতলিপি অনুযায়ী বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যমকে খবর সম্প্ৰচার করতে হচ্ছে। লোকসভা এবং রাজ্যসভার খবরও সাম্প্রতিককালে বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যমগুলি সঠিকভাবে সম্প্রচার করছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন নবি। বিজেপিকে নেতাশূন্য দল বলে অভিহিত করে কংগ্ৰেস সাংসদ বলেন, এরা এখন অসম, মণিপুর, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড এবং ত্ৰিপুরায় অন্য দল থেকে ধারে নেতা আমদানি করে পার্টি চালাচ্ছে। তিন বছর আগে পর্যন্ত উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিজেপির কোনও গুরুত্ব ছিল না। কিন্তু কেন্দ্ৰে ক্ষমতা দখল করার পর ধারে নেতা আমদানি করে তাদের রাজনীতি করতে হচ্ছে।

সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে গোলাম বলেন, নাগাল্যান্ডে বিজেপি নয়, আঞ্চলিক দলগুলিকেই তাঁর দল কংগ্ৰেস তাদের প্ৰতিদ্বন্দ্বী বলে মনে করে। অন্য প্রসঙ্গে বলেন, দেশের অন্যান্য প্ৰান্তের তুলনায় জম্মু-কাশ্মীর এবং উত্তর-পূৰ্বাঞ্চলের খাদ্যাভ্যাস, ধৰ্ম, জীবনশৈলী পৃথক পৃথক। তাই এখানে বিজেপি-র উদ্দেশ্য সিদ্ধি কখনও হবে না। তাঁর অভিযোগ, একজন নাগরিকের রান্নাঘরের ফ্ৰিজে কীসের মাংস থাকবে, তিনি কী খাবেন না-খাবেন, তিনি কী পোশাক পরবেন তা দেখার কাজ সরকারের নয়। মেঘালয় এবং নাগাল্যান্ডের জনতা নিজেদের সংস্কৃতি ও নিজেদের ধৰ্ম রক্ষার জন্য বিজেপি-র বিরুদ্ধে ভোট দেবে বলে মনে করেন গোলাম নবি।

আরেক প্রসঙ্গে গোলাম বলেন, কংগ্ৰেসের আমলে সৃষ্ট নানা প্রকল্প বর্তমান সরকার নাম দিয়ে ফের চালু করছে। এতে করে তারা নিজেরা বাহবা কুড়োনোর চেষ্টা করছে। তাছাড়া, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য অটলবিহারী বাজপেয়ী প্রবর্তিত পৃথক মন্ত্রালয় ডোনার মন্ত্ৰক কংগ্রেস আমলের সৃষ্ট দফতর বলে দাবি করে গোলাম নবি আজাদ বলেন, এই ডোনার মন্ত্রক মোদী স্থাপন করেছেন বলে তিনি কৃতিত্ব নিচ্ছেন। আরও বলেন, উত্তর-পূৰ্বাঞ্চলের অন্যান্য রাজ্যকেও বিশেষ রাজ্যের মৰ্যাদা দিয়ে একশো শতাংশ কেন্দ্ৰীয় প্রকল্প প্ৰদান করা হয়েছিল।। ৯০:১০ অনুপাতে উন্নয়ন খাতে তহবিল আবণ্টন করা হয়েছিল। কেবল তা-ই নয়, নৰ্থ-ইস্ট ইন্ডাস্ট্রিয়াল পলিসি থেকে উত্তর-পূৰ্বাঞ্চলের জন্য বরাদ্দকৃত বহু উন্নয়নমূলক প্রকল্প কংগ্ৰেসের আমলে প্রবর্তিত করা হয়েছিল। অথচ এই সবের গোটা কৃতিত্ব এখন বিজেপি সরকার নিজেদের সৃষ্ট প্রকল্প বলে জনসাধারণের বাহবা নিতে মরিয়া উঠেছে।

ডোনার মন্ত্রক-সহ অন্য কয়েকটি প্রকল্প সম্পর্কে তাঁর বয়ানের পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিকরা এর সত্যতা জানতে চাইলে গোলাম কিছুটা হোঁচট খেয়ে স্বীকার করেন, হ্যাঁ, কয়েকটি প্রকল্প অবশ্য বিজেপি সরকারের আমলে প্রবর্তিত হয়েছে। তবে বেশিরভাগ উন্নয়নমূলক কাজ করে গেছেন তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী। এদিকে কংগ্ৰেসের আমলে অসম তথা দেশে দুৰ্নীতির সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছিল বলে সাংবাদিদের তোলা প্রসঙ্গকে নস্যাত করে দিয়ে গোলামের দাবি, বিজেপি সরকারের আমলেই আন্তর্জাতিকস্তরে দুৰ্নীতি সংগঠিত হচ্ছে। পাশাপাশি বলেন, কংগ্ৰেসের আমলে দুৰ্নীতির তদন্ত হতো, কিন্তু বিজেপি সরকারের আমলে কোনও দুৰ্নীতির বিরুদ্ধে কোনও তদন্ত হয় না।

মণিপুরে অনৈতিকভাবে বিজেপি ক্ষমতা দখল করেছে বলে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, মোদী-অমিতের দল প্ৰবঞ্চনার বলে ভোট আদায় করে। ফলে উত্তর-পূৰ্বাঞ্চলের নেতৃবর্গকে এ সব ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। মেঘালয় প্রসঙ্গে বলেন, কংগ্রেস সরকারের আমলে গৃহীত প্রকল্পগুলি সম্পূর্ণ করতে ওই রাজ্যের জনতা কংগ্ৰেসকেই ফের ভোট দেবেন বলে তিনি আশাবাদী। এদিকে ত্ৰিপুরা ও নাগাল্যান্ডে বিজেপি-র কাছে কংগ্ৰেস আত্মসমৰ্পন করেছে নাকি এক প্ৰশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, উভয় রাজ্যে তাঁর দলের সাংগঠনিক শক্তি খুব সবল নয়। সঙ্গে এ-ও বলেন, উত্তর-পূৰ্বাঞ্চলে সামগ্ৰিকভাবে কংগ্রেসের সাংগঠনিক শক্তি বেশি। কেননা, অসম, মেঘালয় এবং মিজোরামে কংগ্ৰেস বেশ কয়েকবার সরকার গঠন করেছে।

কোন মন্তব্য নেই: