দুর্গাপুর: সম্পর্কের টানাপোড়েন না আর্থিক লেনদেন। শিল্পা খুনে রহস্য ক্রমশ ঘনীভূত। বিয়ের চাপ দেওয়াতে খুন বলে পুলিশি জেরায় জানিয়েছে ধৃত ব্যাঙ্ক ম্যানেজার রাজীব কুমার। ঘটনায় ধৃত ব্যাঙ্ক ম্যানেজারে রানীগঞ্জের বাড়ীতে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে পুলিশের হাতে। পাশাপাশি ঘটনায় ব্যাগবন্দী মৃতদেহ লোপাটে কি কেন 'ভাড়াটে' পাচারকারী ডেকেছিল ম্যানেজার রাজীব তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। ধৃত দম্পতিকে শুক্রবার দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের জামিন খারিজ করে দেন।
বৃহস্পতিবার সকালে দুর্গাপুরে বহতল আবাসনে মেজিয়ার নিখোঁজ তরুনী শিল্পা আগরওয়ালের ব্যাগবন্দী মৃতদেহ উদ্ধার হয়। ঘটনায় ওই ফ্ল্যাটে থাকা ব্যাঙ্ক ম্যানেজার রাজীব কুমার ও তাঁর স্ত্রী মনিষাদেবীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে দুর্গাপুর থানায় শিল্পা আগরওয়ালের পরিবারের লোকজন খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনার তদন্তে, পুলিশি জেরায় খুনের কথা স্বীকার করে ধৃত ব্যাঙ্ক ম্যানেজার রাজীব কুমার। বিয়ের জন্য চাপ দেওয়াতেই খুন বলে জানিয়েছে রাজীব। পুলিশ জানতে পেরেছে, ৯ ফেব্রুয়ারী রাত্রে শিল্পা মাসির বাড়ী থেকে রাজীবের ফ্ল্যাটে উঠেছিল। কারন ওইদিন রাজীবের স্ত্রী মনিষা রাঁচি বাপের বাড়ীর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায়। আর সেই সুযোগে শিল্পার সঙ্গে রাত কাটায় রাজীব। এবং সেখানেই বিয়ের জন্য চাপ দেয় শিল্পা।
জানা গেছে, শিল্পার সঙ্গে সম্পর্ক জানতে পেরেছিল রাজীবের স্ত্রী মনিষা। ওই সম্পর্কের জেরে রাজীব ও মনিষার মনোমালিন্য চলছিল। এমনকি শিল্পার জন্য প্রথমে মেজিয়া ও পরে রানীগঞ্জে বাড়ী নেয় রাজীব। সেখানে মাঝেমধ্যেই শিল্পার সঙ্গে থাকত ও দীর্ঘদিন ধরেই দুজনের শারিরিক সম্পর্কের তথ্য উঠে এসেছে রানীগঞ্জে রাজীবের ওই ফ্ল্যাট থেকে। সেখানে কন্ডোম ও সেক্স বৃদ্ধির ঔষধও পেয়েছে পুলিশ। পাশাপাশি শিল্পার পরনের পোশাক ও মোবাইল ফোনটিও উদ্ধার হয়েছে। ডিসি অভিষেক মোদী অবশ্য জানান," খুনের কথা স্বীকার করেছে রাজীব। অবৈধ সম্পর্কে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিল বলে জানিয়েছে। তখন বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করেছে। তারপর মৃতদেহ লোপাটের জন্য একাধিক পরিকল্পনা করেছিল। সেসব ব্যার্থ হয়। শেষে নগ্ন করে ফ্রিজে রেখেছিল মৃতদেহ। পরে মৃতদেহ সরানোর জন্য ব্যাগবন্দী করে লিফটের পাশে রেখে দিয়েছিল। এবং সকালে ফোনে পুলিশকে জানিয়েছিল।" শিল্পাকে খুনের পরিকল্পনা আগে থেকেই ছিল, তা কার্যত স্পষ্ট।
এদিন রাত্রে রাজীব মদ্যপান করে ঘুমন্ত অবস্থায় বালিশ চাপা দেয় বলে জানতে পেরেছে তদন্তকারী পুলিশ। মৃতদেহের শরীরে একাধিক ক্ষত রয়েছে। ঠোঁটের নীচে তিল কেটে তোলার চেষ্টা হয়। মাথার পিছনে ভারীবস্তু দিয়ে আঘাতের ক্ষত ছিল। এছাড়াও মুখে কাল দাগ দেখে অনুমান, আর্তনাদ ঠেকাতে কি অ্যাসিড ঢেলে দিয়েছিল? পাশাপাশি মৃতদেহ ব্যাগবন্দী করে অন্যত্র সরানোর জন্য কি কোন 'ভাড়াটে' দুস্কৃতী ডেকেছিল রাজীব? তাতে যখন ব্যার্থ হয় তখন লিফটের পাশে ব্যাগবন্দী মৃতদেহ রেখে স্ত্রী মনিষাকে দিয়ে পুলিশে ফোন করানো হয়।বৃহঃস্পতিবার রাত্রেই বেনাচিতির বহুতল আবাসনের চারতলার ফ্ল্যাটে রাজীবকে নিয়ে ঘটনার পুনরনির্মান করে পুলিশ। শুক্রবার ধৃত ব্যাঙ্ক ম্যানেজার দম্পতিকে আদালতে তোলা হলে বিচারক পুলিশ হেপাজতের নির্দেশ দেন।" ডিসি অভিষেক মোদী জানান," সিসি টিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নিজ হেপাজতে নেওয়া হয়েছে। আর জেরা করা হবে।"
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন