সাগরদ্বীপ : সাগরদ্বীপে গরুর চাহিদা এখন বেশ তুঙ্গে। মোক্ষলাভের আশায় মকর সংক্রান্তিতে পুন্যার্থীর দল গরুর লেজ ধরে 'বৈতরণী পার' হন। পুন্যর সঙ্গে পয়সা কামানো- দুই'ই চলে পুরোদমে। দিবারাত্র মাইকে ঘোষণা চলছে মেলাপ্রাঙ্গণে। মরিচঝাঁপি থেকে আসা অজিতের মা, আপনার জন্য নির্মল হালদার বজরং পরিষদের শিবিরে এসে যোগাযোগ করুন। অথবা, কুলতলির মদন জানা আপনার খোঁজ করছৈন।
যেখানেই থাকুন, তথ্যকেন্দ্রের অফিসে এসে যোগাযোগ করুন। এ রকমই কেউ বাঁকুড়া, কেউ আসানসোল থেকে এসে নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছেন মেলার ভিড়ে। তাঁদের খুঁজে পেতে পরিবার-স্বজনরা ঘোষণার দ্বারস্থ হচ্ছেন। আচমকাই যেন ছন্দপতন! একের পর এক হরেক রকম নিখোঁজের নাম ঘোষণার ফাঁকে মাইকে প্রচারিত হল নিখোঁজ এক গরুর প্রাপ্তির কথা। মিনিট সাতের মধ্যে হন্তদন্ত হয়ে এলেন ওই ঘোষণাকেন্দ্রে এলেন ওডিশার গৌরাঙ্গ বেহরা। তাঁর গরু ঘন্টা দুই ধরে উধাও! দেখুন তো, গরুটার গায়ে এই সংখ্যাটা লেখা আছে কি না? মিলে গেল সংখ্যা! আর নিখোঁজ গরু ফিরে পেয়ে বিজয়ীর মত ফের সৈকতে ফিরে গেলেন ওড়িয়া পুরোহিত।
এখানে বৈতরণী মানে সাগরতটে কয়েক কদম আর কী! এর জন্য পুন্যার্থীদের গুনতে হয় সামান্য গাঁটের কড়ি। বাঁধাধরা রেট নেই। চলে দরদাম। গ্রামের গরু এক দিনের জন্য ভাড়া নেন একদল লোক। তাঁরা পুন্যার্থীদের বৈতরণী পার করিয়ে কিছু আয় করেন। অযোধ্যা থেকে সন্ন্যাসী প্রেমদাস এসেছেন জনা পঁয়ত্রিশ সঙ্গী নিয়ে। কপিলমুনির আশ্রমে তিনি জানান, এই আশ্রমের আগে আরও চারটি আশ্রম ছিল এই সাগরতটে। সমুদ্রে সেগুলি তলিয়ে গিয়েছে। ভিন রাজ্যের সাধু সন্ন্যাসীরা বসে পড়েছেন নির্দিষ্ট জায়গায়। বিজয়ওয়ারা, কাটিহার, সীতাপুর, মেরঠ— নানা জায়গা থেকে সন্ন্যাসীরা এসেছেন।
মহাদেবের মত বাঘছাল পরে সারা অঙ্গে ভস্মমাখা এক সন্ন্যাসীকে হাজার চেষ্টা করেও কথা বলাতে পারলেন না সাংবাদিকরা। ক্রুদ্ধ মৌনিবাবা পাশে মাটিতে গেঁথে রাখা ত্রিশূল দেখিয়ে ভয় দেখালেন। সূর্যাস্তের আগেই আলোময় হয়ে উঠছে স্টিমার ঘাট, রাস্তার ধারের পোস্ট, কপিল মুনির আশ্রম। পেল্লাই মেলাপ্রাঙ্গণে জেলখানা, থানা, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, মিসিং পার্সনস স্কোয়াড, দমকল বাহিনী, টেলিফোন বুথ— সব কিছুই আছে। এ বার নজরদারি বাড়াতে আকাশে উড়ছে সাতটি ড্রোন। কাকদ্বীপ, নামখানা, সাগর, মেলাপ্রাঙ্গণের আকাশছবি ধরা পড়ছে কন্ট্রোল রুমের স্ক্রিনে। কে বলবেন, বছরভর প্রায় ঘুমিয়ে থাকা সুনশান সাগরদ্বীপ কপিলমুনির আশ্রমকে কেন্দ্র করে ক’টা দিন এ ভাবে জেগে থাকে?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন