নিয়োগ বিতর্ক এড়াতে শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাস, পড়ুয়াদের আন্দোলন সফল - Aaj Bikel
নিয়োগ বিতর্ক এড়াতে শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাস, পড়ুয়াদের আন্দোলন সফল

নিয়োগ বিতর্ক এড়াতে শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাস, পড়ুয়াদের আন্দোলন সফল

Share This

কলকাতা: দীর্ঘ লড়াই আন্দোলন চালিয়ে অবশেষে সাফল্য পেলেন রাজ্যের ২০১৫ -১৭ শিক্ষাবর্ষের ডিএলএড পড়ুয়া৷ লাগাতার পড়ুয়াদের আন্দোলন-হুঁশিয়ারি ও নিয়োগ বিতর্ক এড়াতে এবার সংবাদমাধ্যমে সরাসরি মুখ খুললেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ ২০১৫ -১৭ শিক্ষাবর্ষের ডিএলএড পড়ুয়াদের সমস্যার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী একটি টিভি চ্যানেলে মন্তব্য করেন, ‘‘প্রশিক্ষণের ফল প্রকাশ না হলেও এবছর টেটে বসার সুযোগ পাবেন আরসিআই থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পড়ুয়ারা৷’’ মোধা তালিকা অনুয়ায়ী তাঁদের চাকরির সুযোগ দেওয়া হবে বলেও জানান শিক্ষামন্ত্রী৷ তবে, এবিষয়ে পর্ষদের তরফে কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে কি না তা এখনও জানা সম্ভব হয়নি৷

পরীক্ষায় বসার দাবি জানিয়ে বিধাননগরে রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অফিসে বিক্ষোভ দেখান পড়ুয়ারা৷ বিক্ষোভ তুলতে গিয়ে রাতে তাদের উপর পুলিশ লাঠিচার্জ করে বলে অভিযোগ৷ ঘটনায় পড়ুয়াদের বেশ কয়েকজন জখম হয়েছেন বলেও জানা গিয়েছে৷ বুধবার রাতে পুলিশের মার জুটলেও বৃহস্পতিবার শিক্ষামন্ত্রীর মন্তব্য পড়ুয়াদের ক্ষতে প্রলেপ দেওয়া গেল বলে মনে করছেন অনেকেই৷


এদিন, শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি বলেন, ‘‌২০১৫ সালে যখন টেট হয় তখন অনেকেরই প্রশিক্ষণ শেষ হয়নি। এদের অনেকেই টেট–এ পাস করেছে। সেই সময় তারা প্রশিক্ষণহীন প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। কিন্তু এখন তারা প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। সেই মেধাতালিকা অনুযায়ী এই প্রার্থীদের সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে দেখতে বলেছি।’‌ প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের টেট হয় অক্টোবর মাসে। বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল ২০১৪ সালে। পরীক্ষায় বসেছিল ২০ লক্ষের কিছু বেশি চাকরিপ্রার্থী। টেট উত্তীর্ণ হয় ১ লক্ষ ২০ হাজার। এর মধ্যে মাত্র ১০ হাজারের প্রশিক্ষণ ছিল। এই প্রসঙ্গে পর্ষদ সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‌এরা ২০১৪-‌১৬’‌র ব্যাচ। ওই সময় এদের প্রশিক্ষণ শেষ হলেও ফল প্রকাশিত হয়নি। এদের সংখ্যা শ’‌দুয়েকের মত। এদের আর টেট দিতে হবে না। এরা সরাসরি ইন্টারভিউর সুযোগ পাবে।’‌ আগামী বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগেই ফের প্রাথমিকে টেট নিতে চলেছে রাজ্য।
পড়ুয়াদের দাবি ছিল, ২০১৫-১৭ বর্ষের ডিইএলইডি কোর্সের ছাত্রছাত্রীরা যাতে টেটে আবেদন করতে পারে সে বিষয়ে প্রশাসন শীঘ্র উদ্যোগ নিক৷  এই দাবিতে সম্প্রতি, ইসলামপুর সার্কেলের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে তাঁরা স্মারকলিপিও দেন৷ কিন্তু, তাতেও কোনও কাজ না হওয়ায় প্রথমে নবান্ন অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছে৷ নবান্ন অভিযান বাতিল করে বিধাননগরে রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অফিসে বিক্ষোভ দেখানে সিদ্ধান্ত নেন পড়ুয়ারা৷ বুধবার ছিল সেই কর্মসূচি৷

জানা গিয়েছে, ২০১৫-১৭ ব্যাচের ডিএলইডি প্রশিক্ষণরত ছাত্র-ছাত্রীদের কোর্স শেষ হয়ে গেলেও তাদের দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। ২০১৫-১৭ ব্যাচের ডিএলইডি প্রশিক্ষণরত ছাত্র-ছাত্রীদের গত জুন মাসেই তাদের কোর্স শেষ হয়ে গেলেও যেহেতু পরীক্ষা নেওয়া হয়নি সে কারণে তারা টেট পরীক্ষায় আবেদন করতে পারছেন না৷ আন্দোলনকারীদের দাবি, চলতি বছরের টেট পরীক্ষায় তাদের আবেদন করতে দিতে হবে। এই দাবিতে জেলায়  জেলায় বিক্ষোভ মিছিল বার করে ডিআইয়ের কাছে ডেপুটেশন জমা দেন। তাদের দাবি না মানা হলে পরবর্তী অনশন আন্দোলনে যাওয়ার হুমকিও দিয়েছেন ছাত্রছাত্রীরা৷


২০১৫-১৭ বর্ষের ডিএলইডি কোর্সের ছাত্রছাত্রীদের বক্তব্য, ‘‘আমাদের প্রথম বর্ষের রেজাল্ট ২০১৬ সালের জুন মাসে বের হওয়ার কথা ছিল। ২০১৭ সালে জুন মাসে দ্বিতীয় বর্ষের রেজাল্ট দেওয়া উচিত ছিল। আমাদের কোর্সের সময় সীমা শেষ হয়েছে। আমরা এখন কলেজ থেকে বেরিয়ে গিয়েছি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত প্রথম বর্ষের রেজাল্টই পাইনি। দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষাও হয়নি। এটা আমাদের ব্যর্থতা নয়। এনসিটিই নিয়ম অনুসারে আমাদের টেট পরীক্ষায় বসার সুযোগ দিতে হবে। বিগত বছরগুলিতে টেটে অপ্রশিক্ষিত প্রার্থীরাও চাকরি পেয়েছে। পরে তাঁরা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন৷’’


মূলত, চলতি মাসে টেটের বিজ্ঞপ্তি জারি করে পর্ষদের তরফে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, প্রশিক্ষণ ছাড়া এবার টেটে বসা যাচ্ছে না। আর এতেই মাথায় হাত পড়ে ২০১৫-১৭ বছরের ডিএলইডি কোর্সের ছাত্রছাত্রীদের৷ তবে, বিজ্ঞপ্তি জারি না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষামন্ত্রীর এই আশ্বাস পড়ুয়াদের কতটা মন জয় করে সেটাই এখন দেখার৷ আপাতত আন্দোলন সাফল্য মোলায় পড়ুয়াদের মাথায় এখন পরীক্ষার প্রস্তুতিই ঘুরপাক খাচ্ছে৷

কোন মন্তব্য নেই: