কলকাতা: অভিনেতা সলমন খানের দ্রুত জামিনলাভের পর বিভিন্ন সংবাদপত্র অভিযুক্তকে মহিমান্বিত করতে উঠেপড়ে লেগেছে। রবিবার এই অভিযোগ তুলে এক ‘হিন্দুস্থান সমাচার’ আয়োজিত কর্মশালায় প্রাক্তন সম্পাদক রন্তিদেব সেনগুপ্ত প্রশ্ন তুলেছিলেন, বিলিয়মান কৃষ্ণসার হরিণ হত্যার ব্যাপারে নিম্ন আদালত যেখানে নিশ্চিত হয়েছে, কেন অভিযুক্তর জামিনলাভে তাঁর স্তুতি করে এত লেখা? এর পরে কী করে আজকের মিডিয়ার ওপর আস্থা রাখবে মানুষ?
রন্তিদেববাবু বলেন, “অভিযোগ উঠল, সংখ্যালঘু বলে তুচ্ছ কারণে সলমনের এই সাজা। অথচ, গরিব ফুটপাথবাসীকে গভীর রাতে বেপরোয়া গাড়ি চাপা দিয়ে সলমান খাঁর বিরুদ্ধে বছরের পর বছর মামলা চলছে। কৃষ্ণসার হরিণ সংক্রান্ত রায়ের পর কোনও পত্রিকা প্রশ্ন করল না, ওই মামলা কোথায় থেমে আছে? কেবল টাকার জোর থাকলে এভাবে জামিন পেয়ে যাবেন নায়ক? কারাগারে নায়কের কষ্ট নিয়ে পৃথক খবর বার হল। এই হল আমাদের আজকের সাংবাদিকতা।’’
প্রেস ক্লাবে এ দিনের আলোচনার বিষয় ছিল ‘আজকের সাংবাদিকতা’ রন্তিদেব প্রশ্ন করেন, পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়নপর্বে এত রক্তক্ষয়, এত হানাহানি— ক‘টি দৈনিক এ নিয়ে উত্তর সম্পাদকীয় লিখেছে? মনোনয়নের সময় একটি দলের এক কর্মী খুন হলেন, খবরটা দায়সাড়া বার হল কোনও গুরুত্ব না দিয়ে। খবরকে রাজনীতির চশমা পড়ে যারা দেখবে, তারা নিশ্চিহ্ণ হয়ে যাবে। তাদের ধ্বংশ অনিবার্য। এখনকার মিডিয়াকে দেখে মনে হচ্ছে জড়ভরতের কথা। উপমা দিতে গিয়ে পুরাণের সংশ্লিষ্ট কাহিনীর উল্লেখ করেন রন্তিদেব।
প্রেস ক্লাবে এ দিনের আলোচনার বিষয় ছিল ‘আজকের সাংবাদিকতা’ রন্তিদেব প্রশ্ন করেন, পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়নপর্বে এত রক্তক্ষয়, এত হানাহানি— ক‘টি দৈনিক এ নিয়ে উত্তর সম্পাদকীয় লিখেছে? মনোনয়নের সময় একটি দলের এক কর্মী খুন হলেন, খবরটা দায়সাড়া বার হল কোনও গুরুত্ব না দিয়ে। খবরকে রাজনীতির চশমা পড়ে যারা দেখবে, তারা নিশ্চিহ্ণ হয়ে যাবে। তাদের ধ্বংশ অনিবার্য। এখনকার মিডিয়াকে দেখে মনে হচ্ছে জড়ভরতের কথা। উপমা দিতে গিয়ে পুরাণের সংশ্লিষ্ট কাহিনীর উল্লেখ করেন রন্তিদেব।
আলোচনার রেশ টেনে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপিকা সৈয়দ তনভীর নাসরিন বলেন, “বিশেষ এক সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচারের অভিযোগের জেরে ২০১৫-তে জাতীয় পুরস্কার-প্রাপকদের কেউ কেউ আগে নানা সময়ে পাওয়া কেন্দ্রীয় খেতাব ফেরৎ দিতে শুরু করেন। কাগজগুলি ফলাও করে এই কাজের মহত্বের কথা লিখল। পাঠকের একাংশ পড়ে আপ্লুত হয়েছিল। অপর অংশের মধ্যেও প্রশ্ন ছিল। কিন্তু কোনও কাগজ প্রশ্ন করল না, ২০১২-তে অসমে অপর সম্প্রদায়ের লোকেদের দাঙায় যখন হত্যা করা হয়েছিল, তখন কেন খেতাবপ্রাপ্তরা তাঁদের কেন্দ্রীয় স্বীকৃতি ফেরৎ দেননি।”
আজকের সাংবাদিকতার চরিত্র বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তনভীর এ দিন বলেন, “আসলে কে প্রগতিশীল, কে নন— তার তকমা দেওয়ার মালিকানা নিয়ে নিয়েছে মিডিয়া। অন্যায়, অপরাধগুলি অনেক ক্ষেত্রেই তাদের চোখে পড়ে না। নির্দিষ্ট ধারণা আর দৃষ্টিভঙ্গীর বৃত্তে আজ আবদ্ধ এই মিডিয়া।’’
তনভীর বলেন, “ফেসবুক আর ট্যুইটারের যুগে সত্য আর সত্য-পরবর্তী— এই দুটো কথার উপযোগিতা আরও বেড়েছে। তাই সোর্স ভেরিফিকেশন অর্থাৎ খবরের যাচাই করার প্রয়োজনীয়তাও বেড়েছে। ভাবুন তো, ২০১৬-র ভোটে এ রাজ্যের সরকারের পতন হচ্ছে বলে লাগাতার ইঙ্গিত দিল একটি বড় দৈনিক ও ওই গোষ্ঠীর প্রভাবশালী টিভি চ্যানেল। পরে দেখা গেল, ওই সব সমীক্ষা ডাহা ফেল। তাহলে কিসের ভিত্তিতে মানুষ সত্যি বলে মেনে নেবে মিডিয়াকে?
কেবল এই রাজ্য বা এই দেশ নয়! উন্নত দেশের মিডিয়াতেও রয়েছে এই অসুখ। তনভীরের মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বহু প্রচারমাধ্যম ও জ্ঞানী বাম-উদারমনাদের নিয়ন্ত্রিত। তাঁরা মনে করেন, রিপাবলিকানদের ভাল কাজ থাকতে পারে না। আবার, রিপাবলিকানরা একটু খারাপ কাজ করলেই মিডিয়াতে তা নিয়ে হইচই পড়ে যায়।
কেবল এই রাজ্য বা এই দেশ নয়! উন্নত দেশের মিডিয়াতেও রয়েছে এই অসুখ। তনভীরের মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বহু প্রচারমাধ্যম ও জ্ঞানী বাম-উদারমনাদের নিয়ন্ত্রিত। তাঁরা মনে করেন, রিপাবলিকানদের ভাল কাজ থাকতে পারে না। আবার, রিপাবলিকানরা একটু খারাপ কাজ করলেই মিডিয়াতে তা নিয়ে হইচই পড়ে যায়।
আলোচনার রেশ ধরে রন্তিদেব বলেন, “রাজা রামমোহন থেকে বিদ্যাসাগর, বঙ্কিমচন্দ্র থৈকে ভূদেব মুখোপাধ্যায়, কাঙাল হরিনাথ থেকে হরিশ্চন্দ্র মুখোপাধ্যায়— অতীতে এই দিকপালরা রাজশক্তির চোখরাঙানিকে উপেক্ষা করে সংবাদপত্রের নির্ভীক কলমের দায় নিয়েছিলেন। অত্যাচার-নিপীড়ণ তাঁদের দমন করতে পারেনি। তার কারণ, প্রাক-স্বাধীনতা ও আন্দোলনের সময়ে আদর্শটাই ছিল মুখ্য। এর জন্য মালিক-সাংবাদিকরা সর্বত্যাগী হতে পেরেছিলেন। এখন মিডিয়া হয়ে উঠেছে বানিজ্যসর্বস্ব।’’
অশোক সেনগুপ্ত, হিন্দুস্থান সমাচার।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন