বাম প্রার্থীদের মনোনয়ন দাখিল করালেন তৃণমূল বিধায়ক, হল মিষ্টি মুখ - Aaj Bikel
বাম প্রার্থীদের মনোনয়ন দাখিল করালেন তৃণমূল বিধায়ক, হল মিষ্টি মুখ

বাম প্রার্থীদের মনোনয়ন দাখিল করালেন তৃণমূল বিধায়ক, হল মিষ্টি মুখ

Share This
বর্ধমান  : পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র দাখিল নিয়ে রাজ্যজুড়ে অশান্তি আবহ অব্যহত। তখন উলাটপুরান ঘটনার নজির পূর্ব বর্ধমানের রায়না ১ ব্লকে। নির্বিঘ্নে বাম প্রার্থীরা যাতে মনোনয়ন দাখিল করতে পারে তার অগ্রণী ভূমিকা নিলেন বর্ধমানের রায়নার তৃণমূল বিধায়ক নেপাল ঘোড়ুই। নিজের দলের কর্মীদের শান্ত রেখে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে এদিন তিনি কার্যত এসকর্ট করে বাম প্রার্থীদের মনোনয়োন পত্র দাখিলের জন্য পৌছে দিলেন বিডিও অফিসের ভিতরে।

তৃণমূল প্রার্থীদের পাশাপাশি এদিন মনোনয়ন দাখিল করলেন জনা ৩০ বাম প্রার্থী। নমিনেশান দাখিল করে বেরিয়ে আসা বাম প্রার্থীদের মিষ্টি মুখ করালেন তৃণমূল বিধায়ক। মিটিয়ে দেওয়া হল বাম প্রথীদের বাড়ি ফিরে যাওয়ার দুটি ট্র্যাক্টের ভাড়াও। বিরোধীদের তোলা সন্ত্রাসের অভিযোগের মাঝেই এদিনের রায়নার ব্যতিক্রমী ঘটনা রাজ্য রাজনীতিতে আলোড়ন ফেলে দিয়েছে। যদিও সিপিএম নেতারা বলছেন পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে তৃণমূল বিধায়ক বাধ্য হয়েছেন বৈষ্ণব সাজছে।

পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র দাখিলের ষষ্ঠ দিনে সকাল থেকেই রায়না ১ ব্লক বিডিও অফিস চত্ত্বর জুড়ে ছিল টান টান উত্তেজনা। সারা ভারত কৃষকসভার রাজ্য সম্পাদক তথা পূর্ব বর্ধমান জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক অমল হালদার ও আর এক জেলা সিপিআই (এম) নেতা উদয় সরকারের নেতৃত্বে এদিন বহু বাম কর্মী ও সমর্থক তাদের দলীয় প্রার্থীদের নিয়ে রায়না ১ ব্লক বিডিও অফিসের বাইরে জড় হন। বিপরীত প্রান্তে তখন জড় হয়ে থাকে শাসক দলের বহু কর্মী ও সমর্থক। দুদলের নেতা ও কর্মীরাই ছিল সঙ্ঘবদ্ধ । এক সময় সবারই মনে হতে থাকে যেকোন মূহুর্তে দুপক্ষের সংঘর্ষ বেঁধে যাবে। এমন পরিস্থিতি দেখে তৎপর হয়ে ওঠে পুলিশ কর্মীরাও। সিপিএমের নেতারা এই সময় অভিযোগ তোলেন, তাদের প্রার্থীরা বিডিও অফিসে ঢুকতে পারছেন না। শাসকদলের নেতা কর্মীরা তাদের বিডিও অফিসে ঢুকতে বাধা দিচ্ছে। বাম নেতারা এমন অভিযোগ তোলার পরেই উত্তেজনা চরমে পৌছায়। পরিস্থিতি কিভাবে সামাল দেবেন তা ভেবে চিন্তায় পড়ে যান পুলিশ কর্মীরাও ।

এমন সময়েই ঘটে যায় উলাটপুরান কাণ্ড। বামেদের তোলা অভিযোগ কানে পৌঁছাতেই বিডিও অফিস থেকে ১ কিমি দূরে রাস্তার পাশে জড় হয়ে থাকা সিপিএম প্রার্থীদের কাছে পৌছে যান তৃণমূল বিধায়ক। পুলিশ কে সঙ্গে নিয়ে তিনি বিরোধী প্রার্থীদের কার্যত এসকর্ট করে নিয়ে যান বিডিও অফিসের ভিতরে মনোনয়ন দাখিল করানোর জন্য। প্রায় জনা তিরিশেক সিপিএম প্রার্থী নিরাপদে মনোনয়ন দাখিল করে পরে বিডিও অফিসের বাইরে বেরিয়ে আসেন । একই সঙ্গে এদিন মনোনয়ন জমা দিলেন ২৪ জন তৃণমূল প্রার্থী। মনোনয়ন জমা দিয়ে বাম প্রার্থীরা বিডিও অফিসের বাইরে বের হবার পর দেখাগেল তৃণমূল বিধায়ক তার দলের কর্মীদের সংগে নিয়ে বাম প্রার্থীদের মিষ্টি মুখ করাচ্ছেন। বাম প্রার্থীরা যে দুটি ট্র্যাক্টরে চড়ে বাড়ি ফিরবেন তার ভাড়াও মিটিয়ে দিলেন বিধায়ক। তৃণমূল বিধায়কের কাছ থেকে এমন আন্তরিক সহযোগীতা পাওয়া বাম প্রার্থীরা যেন এদিন কিছুটা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। বাম কর্মীরা শাসক দলের বিরুদ্ধে আর কোন সমালোচনার রাস্তায় না গিয়ে যে যার নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন ।

বামনেতা ও কর্মীদের উদ্দেশ্যে এদিন এদিন তৃণমূল বিধায়ক নেপাল ঘোড়ুই বার্তা দেন , "অহেতুক শাসক দলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে ফায়দা লোটার চেষ্টা করবেন না। বিধায়ক বলেন, " নিজেদের সাংগাঠনিক দূর্বলতার কারনেই রাজ্যরের বিরোধীরা মনোনয়ন দাখিল করতে পারছে না। উল্টে তারা সন্ত্রাস সৃষ্টি করতে লাঠি , বাঁশ ও অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে বিডিও অফিসে পৌছে শাসক দলের কর্মী ও সমর্থকদের উপর হামলা চালাচ্ছে। বিরোধীরা নিজেরাই সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করে আদালতে দ্বার্থ হচ্ছে । ”নেপাল ঘোড়ুই আরও বলেন , বিরোধীরা প্রার্থী হতে চাইলে নির্ভয়ে মনোনয়ন দাখিল করুন। পূর্বে পঞ্চায়েত নির্বাচনে বামেরা যেভাবে রায়নায় বিরোধীদের উপর আক্রমন সানাতো সে পথে তৃণমূল যাবে না। কারণ সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে না তৃণমূল।"

ভোট আসলেই এতকাল খবরের শিরোনামে জায়গা করে নিত রায়না । বাম আমল থেকেই রায়নায় আশান্তির সূত্রপাত। তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর রায়না যে একেবারে শান্তির মরুদ্যানে পরিণত হয়েছে এমনটাও বলা যাবে না । পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন দাখিলের প্রথম দিন থেকে এই রাজ্যের বীরভূম থেকে বাঁকুড়া, হুগলী থেকে মেদনীপুর সর্বত্র বিরোধীরা অভিযোগ করে আসছেন তাদের প্রার্থীরা মনোনয়ন দাখিল করতে পারছে না। বিরোধীদের অভিযোগ সর্বত্র শাসক দল বাধা দিচ্ছে। মনোনয়ন দাখিল করাতে গিয়ে মাথা ফেটছে প্রাক্তন সাংসদের। প্রতিদিন রাজ্যের কোন না কোন বিডিও অফিসে অশান্তি হচ্ছে।বোম পড়ছে।রক্তাক্ত ঝরছে । এতসবের মধ্যেও এদিন রায়নাবাসী এক অন্য রায়নাকে চাক্ষুষ করলো । একশুরে এদিন রায়নাবাসী বললেন আমরা এমন রায়নাই দেখতে চাই ।

বাম প্রার্থীদের তৃণমূল বিধায়ক নেপাল ঘোড়ুই মনোনয়ন দাখিল করতে সহযোগীতা করেছেন এই যুক্তি যদিও মনতে চাননি সিপিআই(এম) নেতা উদয় সরকার। পাল্টা অভিযোগে তিনি বলেন , "এদিন সিপিএম প্রার্থীদের বিডিও অফিস ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছিল। তবে যে কোন পরিস্থিতির মোকাবিলা করার মতো মনের জোর ও শক্তি নিয়েই সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে বাম কর্মীরা এদিন প্রার্থীদের মনোনয়ন দাখিল করাতে নিয়ে গিয়েছিল । তৃণমূল হামলা চালালে তার মোকাবিলা করা হত। উদয় সরকার বলেন, পরিস্থিতি বেগতিক হতেপারে বুঝেই তৃণমূল বিধায়ক নেপাল ঘোড়ুই এদিন বৈষ্ণব সাজতে বাধ্য হয়েছেন।

কোন মন্তব্য নেই: