কলকাতা: প্রায় তিন বছর ধরে বাড়িতে মায়ের মৃতদেহ আগলে ধরে তাঁর পেনশনের টাকা তুলতেন বেকার ছেলে ৷ ৫০ হাজার টাকা পেনশন পেতেন মা ৷ তাঁর মৃত্যুর পরও নিয়মিত পেনশন তুলে গিয়েছেন ছেলে শুভব্রত মজুমদার ৷ সিনেমাকেও হার মানাবে শুভব্রতর কাহিনি ৷
বুধবার রাতেই গোপন সূত্রে পুলিশ খবর পায় ৷ তবে, পুরো ঘটনা প্রকাশ্যে আসে বৃহস্পতিবার ৷ মা মারা গিয়েছেন ৩ বছর আগে, ছেলে বরাবর বলে এসেছে, পিস হাভেনে রাখা হয়েছে তাঁকে। কিন্তু বাড়িতে হানা দিয়ে হাড় হিম করা ঘটনার সাক্ষী হল পুলিশ। ৩ বছর ধরে মৃত মাকে ফ্রিজে মমি করে রেখে দিয়েছে ছেলে, গায়ে ফর্ম্যালডিহাইড মাখিয়ে, পেট থেকে নাড়িভুঁড়ি বার করে।
ঘটনাটি তারাতলার খুব কাছে, বেহালার ঘোলসাপুরে, ২৫ নম্বর জেমস লং সরণির। প্রশস্ত রাস্তার দোতলা বাড়ি। এফসিআইয়ের প্রাক্তন কর্মী বীণা মজুমদার প্রায় তিন বছর আগে বেহালার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান। তাঁর স্বামী গোপালচন্দ্র মজুমদারও ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার আধিকারিক ছিলেন। স্ত্রী-র মৃত্যুর পর আর সৎকার করেননি। ৯০ বছর বয়সী গোপালচন্দ্রবাবুর বিশ্বাস ছিল, ছেলেই স্ত্রীকে বাঁচাবেন। তাঁর কথাতেও অসংলগ্নতা ধরা পড়ে।
প্রতিবেশীদের অভিযোগ, বৃদ্ধ গোপালবাবু ছেলের কীর্তির কথা জানতেন। প্রতিবেশীদের বলেন, দেহ পিস হাভেনে রাখা হয়েছে। কিন্তু গোপন সূত্রে খবর পেয়ে গতকাল রাতে তাঁর বাড়িতে হানা দেয় বেহালা থানার পুলিশ। শুভব্রতর বয়স পঞ্চাশের কোঠায়, এক সময় পড়াশোনা করতেন লেদার টেকনোলজি নিয়ে। প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, আগে বানতলার চর্মনগরীর একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করলেও তা ছেড়ে দেন শুভব্রত, তারপর থেকে বিশেষ কিছু করতেন না, ভবঘুরে স্বভাবের ছিলেন। থাকতেন মা ও বাবার সঙ্গে।
বীণা দেবী সরকারি চাকুরে ছিলেন, তাঁর পেনশন পাওয়ার জন্য এমন ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে প্রতিবেশীদের দাবি। গোপালবাবুর কাছে স্ত্রীর ডেথ সার্টিফিকেট দেখতে চাইলে তিনি তা দেখাননি বলে অভিযোগ। পুলিশকে প্রথমে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন বীণাদেবীর ছেলে। কিছু না পেয়ে ফিরে যায় পুলিশ। কিছুক্ষণ পর আবার পুলিশ এলে শুভ দরজা খোলেন না। অনেক পরে খোলে। সেসময় দুর্বোধ্য ভাষায় কথা বলতে থাকেন । একতলার তালাবন্ধ ঘর খুলতে রাজি হন না তিনি। পুলিশ চাপ দিয়ে খোলে। দুটি আলাদা ঘরে দুটি ফ্রিজার।
আইসক্রিম রাখার মত বড় একটি ফ্রিজ, তার মধ্যে কার্যত মমি করে রাখা বীণা দেবীর দেহ। বুক চেড়া। নাড়িভুঁড়ি বের করে সেলাই করে রাসায়নিক দিয়ে সংরক্ষণ করে রাখা ছিল দেহ। শুভকে এরপরই আটক করে পুলিশ ৷ বেলা দেড়টার পর দেহ নিয়ে যাওয়া হয় ময়না তদন্তের জন্য৷
বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থলে আসেন ডিসি সাউথ ওয়েস্ট ডিভিশন। জানা গিয়েছে, বেকার শুভব্রত দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মেডিক্যাল জার্নাল নিয়ে পড়াশোনা করতেন। কীভাবে দেহ সংরক্ষণ করতে হবে সে বিষয়েও চর্চা করতেন তিনি। জানা গিয়েছে, দু’বছর ধরে লাইফ সার্টিফিকেট দেখিয়ে তিনি মায়ের পেনশনের টাকা তুলত। তাঁর মানসিক অবস্থা খতিয়ে দেখতে পুলিশ চিকিৎসকের সাহায্য নিচ্ছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন