নাবালিকা ধর্ষণ ও জ্যান্ত পুড়িয়ে মারার অভিযোগে ধৃত কংগ্রেস নেতা - Aaj Bikel
নাবালিকা ধর্ষণ ও জ্যান্ত পুড়িয়ে মারার অভিযোগে ধৃত কংগ্রেস নেতা

নাবালিকা ধর্ষণ ও জ্যান্ত পুড়িয়ে মারার অভিযোগে ধৃত কংগ্রেস নেতা

Share This

গুয়াহাটি: রাজ্য কাঁপানো বারো বছরের এক বালিকাকে ধর্ষণ করে জ্যান্ত আগুনে পুড়িয়ে মারার অভিযোগে মূল অভিযুক্ত মণ্ডল কংগ্রেস সম্পাদক জাকির হুসেন (২২)-কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রবিবার রাতে তাকে নগাঁও শহরের ইটাপাড়া লাওগাঁওয়ের পার্শ্ববর্তী বেলতলি এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। 

খোদ মুখ্যমন্ত্রীর মনিটরিঙে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করায় সন্তোষ ব্যক্ত করলেও এবার তার ফাঁসির দাবিতে আজ সোমবার গোটা দিন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সরব বিক্ষোভ প্রতিবাদ করেছেন জনসাধারণ। বিভিন্ন মহল থেকে জঘন্য এই অপরাধীদের হয়ে যাতে কোনও আইনজীবী ওকালতি না করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের বার অ্যাসোসিয়েশনও জাকিরকে কোনও সহায়তা করা হবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে। আজ তাকে সিজেএম আদালতে তোলা হলে পাঁচদিনের রিমান্ডে এনেছে পুলিশ। প্রসঙ্গত, ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুই নাবালক রুহুল এবং ইমদাদুল নামের দুষ্কৃতীকে শুক্রবারই আটক করেছিল পুলিশ।

শুক্রবার পঞ্চম শ্ৰেণির কিশোরী ছাত্রীকে দুই সহপাঠির সামনে ধর্ষণ করে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে জ্বালিয়ে দিয়েছিল তিন দুষ্কৃতী। শরীরের ৯০ শতাংশ অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় মেয়েটিকে গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে রাতের দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে সে। ঘটনা নগাঁও জেলার বটদ্রবা থানা এলাকার ধনিয়াভেটি লালুংগাঁওয়ে ঘটেছিল।

শুক্রবার বিকেলে সংঘটিত ঘটনার পর এদিন সন্ধ্যায় এই লোমহর্ষক ঘটনার তদন্ত দ্রুতগতিতে চালিয়ে শীঘ্র ফেরার মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে পুলিশপ্রধানকে নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল। ওই নির্দেশের পর ঘটনার তদন্তভার বটদ্রবার ওসির পরিবর্তে দুই এডিজিপি মুকেশ আগরওয়ালা এবং হরমিত সিংকে দেন রাজ্যপুলিশের ডিজি মুকেশ সহায়। তাঁরা ফেরার জাকিরকে পাকড়াও করতে নিজেদের মতো জাল পাতেন। জানা গেছে, জাকিরের পূর্ব রেকর্ড ঘেঁটে সে যেহেতু নারীদেহ পিপাসু, তাই সম্ভাব্য জায়গাগুলিতে সাদাপোশাকে মহিলা পুলিশ নিয়োগ করা হয়েছিল।
পলাতক জাকিরের মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে এবং তার ঘনিষ্ঠদের জেরা করে পুলিশ জানতে পারে সে মৈরাবাড়ি থেকে নগাঁও শহরের উপকণ্ঠ লাওগাঁওয়ে আসবে। সে অনুযায়ী ফাঁদ পাতা হয়। সে একটি বাইকে করে আসার পথে তার সামনে প্রতিরোধ গড়ি তোলা হয়। বাইক চালাচ্ছিল জাকির নিজে। সে সময় বাইক ছেড়ে পালাতে গেলে পুলিশ তিনজনকেই ধরে ফেলে।

জাকির হুসেনকে গ্রেফতারের পর আজ সোমবার এক সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে এডিজিপি হরমিত সিং জানিয়েছেন, তার অপরাধ গুরতর। সে অনুযায়ী কঠোর থেকো কঠোরতম ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। সে যাতে কোনও আইনি ফাঁক গলিয়ে বেরিয়ে আসতে না পারে তার ব্যবস্থা নেবে বলেও রাজ্যবাসীকে আশ্বস্ত করেছেন এডিজিপি সিং।

তিনি জানান, কেবল জাকির নয়, তার গোটা পরিবারকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। শুক্রবারের ঘটনার পর এরা সবাই বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছিল। এমন-কি তার বিবাহিত বোনও পালিয়ে গিয়েছিল। এরা সবাই অপরাধী। জাকিরের বাবাও এক যুবতী ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত। বাবা আব্দুল রাজ্জাক ও ছেলে জাকির মিলে এক যুবতীকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছিল। তাছাড়া একই অপরাধে গত ২০১৪ সালে গ্রেফতার হলেও জুভেনাইল আইনের বলে আদালত থেকে ছাড়া পেয়ে গিয়েছিল জাকির। জেল থেকে মুক্ত হলে তাকে বিয়ে দেন তার বাবা। তার দুই সন্তান রয়েছে। ছেলেবেলা থেকেই সে নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত।

জানা গেছে, ধর্ষণের অভিযোগে ধৃত জাকির হুসেন নগাঁও জেলার বটদ্রবা এলাকার ভোমরাগুড়ি মণ্ডল কংগ্রেসের সম্পাদক। এ নিয়ে আজ রাজ্য বিধানসভায় ধর্ষণ কাণ্ডকে নিয়ে কংগ্রেস হট্টগোল শুরু করলে পালটা তাদের চেপে ধরেন বিজেপি বিধায়করা। তাঁরা বলেন, রাজ্যের উপর্যুপরি ধর্ষণের জন্য মূলত কংগ্রেসই দায়ী। এর প্রমাণস্বরূপ তারা জাকিরের প্রসঙ্গ তুলে কংগ্রেসকে তুলোধোনা করেন।

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, শুক্রবার বেলা প্রায় ২.৩০ নাগাদ পঞ্চম শ্ৰেণির এক ছাত্রী স্কুল ছুটির পর তার ঘরে ফিরছিল। সে সময় রাস্তা থেকে মেয়েটিকে জাকির হুসেন (২২) নামের এক দুর্বত্তের নেতৃত্বে তিনজনের এক দল তাকে তুলে পাশের জঙ্গলে নিয়ে দলবদ্ধভাবে ধৰ্ষণ করে। এর পর তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। বিকেল গড়িয়ে সন্ধে হয়ে যাচ্ছে দেখে মেয়েটির মা বাবা এবং স্থানীয় মানুষ তার খোঁজে বের হয়ে তাকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করেন। এর পর তাঁরা নগাঁওয়ে ভোগেশ্বরী ফুকননী অসামরিক হাসপাতালে নিয়ে অগ্নিদগ্ধ মেয়েটিকে ভরতি করান। কিন্তু তার শরীরের প্রায় ৯০ শতাংশ পুড়ে যাওয়ায় শীঘ্র মেয়েটির উন্নত চিকিৎসার জন্য গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে পাঠিয়ে দেন ডাক্তাররা। গুয়াহাটি আসার সময় রাস্তায়ই কিশোরীটি মৃত্যুবরণ করে।

জানা গেছে, লালুংগাঁওয়ের সরকারি গ্ৰ্যাজিং ল্যান্ডের ৭৩৩ নম্বর দাগের সরকারি জমি জবরদখল করে সেখানে আসাম টাইপের পাকা ঘর বানিয়ে দিব্যি বসবাস করছিল জাকিরেরা। কংগ্রেস আমলে দলের মণ্ডল সম্পাদকের বলে বলিয়ান হয়ে স্থানীয় মানুষদের কাছে ত্রাস সৃষ্টি করেছিল সে। এলাকায় ডাকাতি-রাহাজানি সংঘটিত করে সন্ত্রাসরাজ কায়েম করেছিল জাকিরের পরিবার। তার জন্য গ্রামের মানুষ তটস্থ থাকতেন, জানিয়েছেন এলাকাবাসীরা।

কোন মন্তব্য নেই: