কলকাতা: কলেজে ভর্তি হওয়া অতিরিক্ত পড়ুয়া এবং অধ্যাপক নিগ্রহ ইস্যু নিয়ে শুক্রবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে পর্যালোচনা হয়| কলেজে ভর্তি হওয়া অতিরিক্ত পড়ুয়াদের রেজিস্ট্রেশনই দেওয়া হবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ওই বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু তাতে সমস্যা মেটেনি। উল্টে গোলমাল শুরু হয়েছে বেশ কয়েকটি কলেজে। তার জেরে বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে ফের আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পরেও বিষয়টি নিয়ে কথা হবে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্তা।
অধ্যাপক নিগ্রহ ইস্যুতে বৃহস্পতিবার চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করে সিপিএম প্রভাবিত সংগঠন ‘কুটা’। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, শিক্ষক সংগঠনের প্রতিনিধি এবং শিক্ষাবিদদের নিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজাবাজার ক্যাম্পাসে সভা করে তারা। আজ, শুক্রবার রাজাবাজার ক্যাম্পাসে অধ্যাপক ভাস্করচন্দ্র দাসকে ছাত্রের চড় মারার ইস্যুটি সিন্ডিকেট বৈঠকে আলোচিত হয়। অন্যান্য বক্তাদের পাশাপাশি আক্রান্ত অধ্যাপকও দোষী ছাত্রের কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন।
আগে টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সৌরভ অধিকারীর হাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ওই অধ্যাপক। তখনও ঠিক একই জায়গায় সভা করেছিল কুটা। বৃহস্পতিবার সভায় উপস্থিত ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায়, ওয়েবকুটার সাধারণ সম্পাদক শ্রুতিনাথ প্রহরাজ, অ্যাবুটার সভাপতি তরুণকান্তি নস্কর, কুটার সম্পাদক রামপ্রহ্লাদ চৌধুরী, জুটার সম্পাদক নীলাঞ্জনা গুপ্ত এবং সুধীন দত্তর মতো বেশ কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক তথা শিক্ষাকর্তা।
সভায় ভাস্করবাবু তাঁকে মারধর ঘণ্টা ধরে অত্যাচারের পুঙ্খাণুপুঙ্খ বর্ণনা দেন। তা শুনে উপস্থিত অধ্যাপকদের অনেকেই অবাক হন। যে অধ্যাপকরা আগে বিষয়টি বিশদে শোনেননি, তাঁরা ক্ষোভে-ঘৃণায় ফেটে পড়েন। ভাস্করবাবু এই ইস্যুতে কুটাকে জড়ানোয় বুধবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন খোদ শিক্ষামন্ত্রী। কিন্তু ওই অধ্যাপক পালটা বলেন, আমি তো কোনও রাজনৈতিক সংগঠনের দ্বারস্থ হইনি।
কুটা শিক্ষকদেরই একটি সংগঠন এবং আমি তার সদস্য। তা নিয়ে পার্থবাবুর কোনও আপত্তি থাকলে আমার কিছু করার নেই। তাঁকে চড় মারার ঘটনায় অভিযুক্ত গৌরব দত্ত মুস্তাফিকে সিন্ডিকেট দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেবে বলেই আশাপ্রকাশ করেছেন তিনি। নাহলে সহকর্মী এবং শুভানুধ্যায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে তিনি পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।
সূত্রের খবর, গৌরব দত্ত মুস্তাফিকে কড়া শাস্তি দিলে চাপে পড়বেন ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদিকা লগ্নজিতা চক্রবর্তী। কারণ, তাঁর বিরুদ্ধে খোদ উপাচার্যকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করার অভিযোগ রয়েছে।
সূত্রের খবর, গৌরব দত্ত মুস্তাফিকে কড়া শাস্তি দিলে চাপে পড়বেন ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদিকা লগ্নজিতা চক্রবর্তী। কারণ, তাঁর বিরুদ্ধে খোদ উপাচার্যকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করার অভিযোগ রয়েছে।
এই ঘটনার জেরে বেশ কিছুদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেননি উপাচার্য সোনালী চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিযোগটি আপাতত ঠান্ডাঘরে রয়েছে। কিন্তু ভাস্করবাবুর সঙ্গে কথা বলার সময় সহমর্মী উপাচার্য নিজের হেনস্তার কথা উল্লেখ করেছিলেন। ফলে তিনি যে সেই কথা ভোলেননি, তা বোঝাই গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি অনুযায়ী লগ্নজিতার বিরোধী শিবিরের সদস্য হল গৌরব। কিন্তু গৌরব শাস্তি পেলে তাঁর বিষয়টি নিয়েও টানাটানি শুরু হবে। তাই তিনি গৌরবের শাস্তি কামনা করবেন না বলেই মনে করছেন অনেকে।
কলকাতার কিছু কলেজে টাকার বিনিময়ে রাজ্যের বহু কলেজে স্নাতক স্তরে বাড়তি পড়ুয়া ভর্তি করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। সেই সব অভিযোগ পেয়ে সব তথ্য খতিয়ে দেখেন সিন্ডিকেট-সদস্যেরা। তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কলকাতার আনন্দমোহন কলেজেই বাড়তি ১১০ জন ভর্তি হয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, যারা বাড়তি পড়ুয়া ভর্তি করেছে, সেই তালিকায় রয়েছে বজবজ, ভাঙড়, রামমোহন কলেজ, শিবনাথ শাস্ত্রী কলেজ, বিদ্যাসাগর কলেজ, হুগলির ধ্রুবচাঁদ হালদার কলেজ, শ্রীরামপুর গার্লস, কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজ (দিবা) এবং অন্য কয়েকটি কলেজ। সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, বাড়তি পড়ুয়াদের রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হবে না। এ ছাড়াও, গত সপ্তাহে সিটি কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের লক্ষ করে ইট ছোড়েন রেজিস্ট্রেশন না-পাওয়া পড়ুয়াদের একাংশ। বিষয়টি নিয়েও এ দিন কথা হয় বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্তা।
কেবল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বা তার অধীন নানা কলেজে নয়, আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে অন্য প্রতিষ্ঠানেও। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউটাউন ক্যাম্পাসে শুক্রবার এম টেক প্রথবর্ষের ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলন হয়। আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চলেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, জানালেন অস্থায়ী উপাচার্য নুরশাদ আলি | বৃহস্পতিবার গভীররাত পর্যন্ত অস্থায়ী উপাচার্যকে ঘেরাও, হেনস্থার অভিযোগ অন্য শিক্ষকদেরও। সেজন্য আজ বৈঠকে শাস্তির সিদ্ধান্ত নিয়ে কথা হয়| আজও আন্দোলন করে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা, তবে আজ উপাচার্যকে ঘেরাও করা হয়নি।
অশান্তি চলছে শিবপুরের আইআইইএসটি-তেও। সোমবারের পরে ফের বৃহস্পতিবার অশিক্ষক কর্মীদের বিক্ষোভে উত্তাল হয় শিবপুরের আইআইইএসটি। কাগজে-কলমে শিবপুরের বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভারসিটি মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের অধীন। কিন্তু, অশিক্ষক কর্মচারীদের বেতন এখনও রাজ্য সরকারের বেতন কাঠামো অনুযায়ীই হচ্ছে। এর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটে থেকে সাড়ে ছটা পর্যন্ত প্রায় দু’ঘণ্টা প্রতিষ্ঠানের অধিকর্তা অজয় রায়কে ঘেরাও করে রেখেছিলেন অশিক্ষক কর্মচারীরা। অধিকর্তা এদিন সকাল সাড়ে এগারোটার মধ্যে এই সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু, সকালে তিনি কাউকে না জানিয়ে অফিস ছেড়ে চলে যাচ্ছিলেন বলে অভিযোগ।
তখন তাঁর গাড়ি আটকে বিক্ষোভ দেখান অশিক্ষক কর্মচারীরা। তখন তিনি তাঁদের সাসপেন্ড করার হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেছেন কলেজের স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা। প্রতিবাদেই বিক্ষোভে শামিল হন তাঁরা। পরে তাঁরা আচার্য জগদীশচন্দ্র ভবনের আটতলায় প্রশাসনিক বিষয়ের ডিনের ঘরে ঢুকে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। বেশ কিছুক্ষণ সেখানে বিক্ষোভ দেখানোর পরে তাঁরা অধিকর্তার অফিসের সামনে বসে পড়ে স্লোগান দিতে থাকেন। এই বিক্ষোভে স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা ছাড়াও ছিলেন শিক্ষাবন্ধু সমিতির সদস্যরা। শুক্রবারও সেখানে বিক্ষোভ চলে।
২০১৪ সালে রাজ্য সরকারের হাত থেকে প্রতিষ্ঠানটি কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের অধীনে আসে। তারপর থেকেই শুরু হয় সমস্যা। অধ্যাপক ও লেকচারারদের মাইনে কেন্দ্রীয় সরকারের বেতনক্রম অনুযায়ী হলেও, অশিক্ষক কর্মীরা এখনও বেতন পান রাজ্যের বেতনক্রম অনুযায়ী। সমস্যা সমাধানের জন্য মানবসম্পদ উন্নয়ন দফতরের অধীনে যাওয়ার পর থেকে মোট চারবার কমিটি গড়া হলেও কোনও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের। যদিও স্টাফ অ্যাসোশিয়েশনের অভিযোগ প্রসঙ্গে আধিকারিকরা কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন