কলকাতা: মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের দাম্পত্য কলহ ও আইনি বিবাদের রেশ অস্বস্তিতে ফেলল তৃণমূল নেতৃত্বকে। মঙ্গলবার এ ব্যাপারে মেয়র গৃহিনীর প্রতিক্রিয়া ও তা নিয়ে মেয়রের জবাব নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে ব্যাখ্যা দিতে হল দলের মহাসচিব তথা পরিষদীয় ও শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে।
সূত্রের খবর, এদিন আলিপুর আদালতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে রত্না দেবী বলেন, “এতদিন চুপ করে থাকতে বলেছিলেন। এবার সম্মতি পেয়ে গিয়েছি। অনেক কিছু বলার আছে। প্রকাশ্যে বলব।“ বিধানসভা ভবন থেকে পুরভবনে রওনা হওয়ার সময়ে মেয়রকে সাংবাদিকরা এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া চান। মেয়র বলেন, “কী বলবেন, আমার পক্ষে কিছু বলা সম্ভব নয়। যে মানসিক অবস্থার মধ্যে দিয়ে আমাকে যেতে হচ্ছে, তা যেন চিরশত্রুরও না হয়!”
দুই দফতরের মন্ত্রী তথা কলকাতা পুরসভার মেয়রের মত নেতার এই ঘটনায় কী দলের সুনামহানি হচ্ছে? পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কে কেন রত্না চ্যাটার্জিকে চুপ করে থাকতে বলেছিলেন?“ এক সাংবাদিক জবাবে বলেন, “রত্নাদেবীর দাবি, খোদ দিদি, মানে দলনেত্রী মুখ খুলতে না করেছিলেন।“ পার্থবাবু তখন বলেন, “মুখ খুললে খুলবেন! সম্মতি পাওয়ার কীআছে? দিদি এর মধ্যে আসছেন কী করে? মনুয়াকান্ডের কত রকম খবর তো বার হচ্ছে!”
প্রসঙ্গত বলা যায়, মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় গত ১৩ নভেম্বর তাঁর স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে পারিবারিক হিংসা ও নিষ্ঠুরতার অভিযোগ এনে বিবাহবিচ্ছেদ চেয়ে যে মামলা করেন । এই মামলাটির নম্বর ২৭৩৯/২০১৭ । এ মামলাটি বিচারের জন্য পাঠানো হয় আলিপুরের ষষ্ঠদশ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারকের এজলাশে । বিবাহ বিচ্ছেদ মামলায় শোভন অভিযোগ করেন, তাঁর স্ত্রী রত্নার বেহিসাবি খরচের নেশা আছে । এতো খরচ সামাল দেওয়া তাঁর পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছে না । শুধু এ কারণেই স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বনিবনাও হচ্ছে না । তাই বিবাহবিচ্ছেদ চান শোভন।
একই সঙ্গে শোভন জানিয়েছেন, তাঁর ১৩ বছরের মেয়ের দায়িত্ব তিনি নিতে চান, নিজের কাছে রাখতে চান । কিন্তু ২১ বছরের ছেলে সম্পর্কে শোভনের কিছু বলার নেই । কারণ ছেলে প্রাপ্তবয়স্ক । সে নিজে যা ভালো বুঝবে, তাই করবে । এই মামলা রুজু করার দু-তিনদিন আগে পর্ণশ্রী থানাতেও মেয়র তাঁর স্ত্রীর নামে একটি অভিযোগ দায়ের করেন মেয়র । রত্নাদেবীর বিরুদ্ধে পারিবারিক হিংসা এবং নিষ্ঠুরতার অভিযোগ আনা হয় তাতে ।
উল্লেখ্য, নারদ-কাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পর যখন শোভনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তখনই রত্নাদেবীর নাম উঠে আসে । মেয়রের স্ত্রী হিসেবে তিনি ২০১৬ সালে জুন মাসে নিউ মার্কেট থানায় নারদ স্টিং অপারেশনের মূল কর্তা ম্যাথু স্যামুয়েলের নামে অভিযোগ দায়ের করেন । অভিযোগে বলা হয়,’তাঁর স্বামী শোভনের নাম কলঙ্কিত করার চেষ্টা করছেন ম্যাথু’। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই কলকাতা পুলিশ ম্যাথুর নামে তদন্ত শুরু করে । পুলিশের তরফে বারে বারে তলবও করা হয় ম্যাথুকে ।
নারদ কাণ্ডের তদন্তে নেমে এই বছরেই সিবিআই এবং ইডি ডেকে পাঠায় মেয়রকে । এই দুই তদন্তকারী সংস্থার জেরায় মেয়র জানিয়েছিলেন, তাঁর আয়-ব্যায় সংক্রান্ত যাবতীয় হিসেবপত্র দেখেন তাঁর স্ত্রী রত্না । এর পরে রত্নাকেও ডেকে পাঠানো হয় । এই মামলার প্রেক্ষিতে এমন কথাও ভেসে বেড়াচ্ছে যে, বিবাহ বিচ্ছেদের গোটা বিষয়টাই সিবিআই এবং ইডির ফাঁস থেকে বাঁচতে গড়াপেটা নাটক । তবে এর মধ্যে তৃতীয় একটি মুখের ভূমিকা নিয়ে জল্পনা ভেসে উঠেছে যিনি নাকি সাদার্ন অ্যাভিনিউর কাছে থাকেন । রত্না শিবিরের বক্তব্য তদন্তের জন্য গট আপ নয় । কারণ নথির সময় পাল্টানো যায় না । বরং বিপদের সময় ইচ্ছা করে তাঁর ঘাড়ে দায় চাপানোর চেষ্টা হচ্ছে । বিষয়টি মেয়রের ব্যক্তিগত বলেই তাদের অভিমত । এর মধ্যে জনৈকা বৈশাখীর নাম ঘুরছে । তবে এবিষয়ে কারুর কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন