কলকাতা : পুরোদস্তুর ছাত্র সংসদ গড়ার দাবিতে ফের বিক্ষোভে উত্তাল হল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় । মাঝখানে ছিল মাত্র পাঁচ মাসের বিরতি, পুনরায় সোমবার রাত থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের একাংশ অবস্থান বিক্ষোভ করলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। রাতভর ক্যাম্পাসে আটকে থাকলেন উপাচার্য এবং সহ উপাচার্য। যদিও আন্দোলনরত পড়ুয়ারা জানিয়েছেন, "উপাচার্যকে আটকানো হচ্ছে না, তিনি গেলে যেতে পারেন। কিন্তু যেতে হবে পড়ুয়াদের মাড়িয়ে।" কিন্তু, রাতভর উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়েই থেকে যান। বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে যাননি তিনি।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিক্ষোভ নিয়ে যথেষ্ট কড়া শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। মঙ্গলবার তাঁর প্রতিক্রিয়া, পড়ুয়াদের একাংশ অচলাবস্থা তৈরি করে। পরিকাঠামো উন্নয়নে আন্দোলন করে না পড়ুয়ারা। যাদবপুরে ছাত্র কাউন্সিলের নির্বাচনই হবে। যাদবপুরে ছাত্র আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়েই মঙ্গলবারই প্রশ্ন তোলেন উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। তাঁর যুক্তি, আইন তো সরকার এনেছে । সেই আইন সরকারকেই বদলাতে হবে । সরকারের সঙ্গে আলোচনার জন্য যাদবপুরের সবপক্ষকে নিয়ে কমিটি গড়ার প্রস্তাব দিয়েছে কর্তৃপক্ষ । রাতে ছাত্রদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেন উপাচার্য, যদিও এই নিয়ে এখনও কোনও সমাধান সূত্রে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।
২০১৭ সালের আগস্ট মাসে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ছাত্র সংসদের বদলে ছাত্র কাউন্সিল তৈরির কথা ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার। সেন্ট জেভিয়ার্সের ধাঁচে চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে এই অরাজনৈতিক কাউন্সিল তৈরির কথা ছিল। এই নিয়ে নির্দেশিকা জারি হলেও গত আগস্ট মাসেই প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন ছাত্র-ছাত্রীদের একাংশ । সোমবার একই ইস্যুতে ফের শুরু হয় আন্দোলন । সোমবার বিকেল চারটেয় এই নিয়ে কর্মসমিতির বৈঠক বসে । সেখানে ছাত্র সংগঠনগুলি দাবি জানায়, ছাত্র কাউন্সিল বাতিল করে ছাত্র সংসদ ফেরাতে হবে। এ ব্যাপারে দু’পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক হলেও সমাধানসূত্র মেলেনি । এমনকি এর পরিণতিও স্পষ্ট নয় ।
বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ উপচার্য জানান, আগস্ট মাসে একটি প্রস্তাব জমা পড়ে । এরপর পড়ুয়ারা মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন । তারপর অবশ্য পড়ুয়াদের থেকে কোনওরকম ফিড ব্যাক পায়নি বিশ্ববিদ্যালয় । সহ উপাচার্য স্পষ্ট করে দিয়েছেন যেহেতু সরকারি নোটিফিকেশন হয়েছে, তাই ছাত্র কাউন্সিলের বিষয়ে তাদের পক্ষে কিছু করণীয় নেই । রাত বারোটার সময় আন্দোলনকারীদের শেষ প্রস্তাব দেওয়া হয় । তারপরও জট কাটেনি । বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বার্তা দিয়েছেন আলোচনা আরও বিস্তৃত হওয়া প্রয়োজন । কিন্তু পড়ুয়ারা তাদের দাবিতে অনড়। রাতভর ক্যাম্পাসে আটকে থাকেন উপাচার্য এবং সহ উপাচার্য ।
তবে আন্দোলনকারীদের দাবি এটি ঘেরাও নয় অবস্থান । আধিকারিকদের বেরোতে হলে তাঁদের উপর দিয়ে যেতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন আন্দোলনকারীরা । পড়ুয়াদের একাংশের অভিযোগ ছাত্র সংসদের নামে বিশ্ববিদ্যালয় তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে । ছাত্র সংসদ নিয়ে স্পষ্ট কিছু না জানা পর্যন্ত আন্দোলনে অনড় আন্দোলনকারীরা । যে ছাত্র কাউন্সিল নিয়ে এত বিতর্ক তা একেবারে অরাজনৈতিক । নয়া বিধি বিধানসভায় আইন আকারে পাশ হয়েছে । এই ব্যাপারে সরকার যে পিছু হটছে না তা আগেই জানিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় । সব মিলিয়ে বছরের শুরুতে আরও একবার অচলাবস্থা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন