কলকাতা : দু’শো বছর জুড়ে ছড়িয়ে থাকা নানা ইতিহাসের সাক্ষী প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়। রয়েছে নানা স্মারক, বই, দলিল। আগামী শুক্রবার সেই সব নিয়ে তৈরি হওয়া জাদুঘরের যাত্রা শুরু হবে। রাজ্যপাল তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর হাতে উদ্বোধনের পরেই দেখা যাবে অমূল্য নানা সংগ্রহ। পাশাপাশি, কিছু স্মারকের দেখা মিলবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা ভবনের করিডরে। বঞ্চিত হবে না প্রেসিডেন্সির দ্বিতীয় ক্যাম্পাসটিও।
এ শহরের প্রেসিডেন্সিতেই রয়েছে ১৬১৯ সালে অক্সফোর্ডে ছাপা বই। রাখা আছে শ্রীরামপুর প্রেসে ছাপা অনেক বইও। এ সবের প্রতিলিপিও জায়গা পাবে ওই জাদুঘরে। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজেরও বেশ কিছু বই প্রেসিডেন্সিতে রয়েছে। ১৮৫৪ সালে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে ওই কলেজের কিছু বই চলে যায় অক্সফোর্ডে। আরও কিছু চলে যায় জাতীয় গ্রন্থাগারে। বাকি বই চলে আসে প্রেসিডেন্সিতে। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের সিলমোহর দেওয়া সেই সব বইয়ের প্রতিলিপি দেখা যাবে এ বার।
একসময়ে প্রেসিডেন্সি কলেজে বক্তৃতা দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রয়েছে সেই বক্তৃতার প্রতিলিপি। প্রেসিডেন্সির ছাত্র থাকাকালীন অমর্ত্য সেন কলেজ ম্যাগাজিনে যে লেখাটি লিখেছিলেন, তা-ও সংরক্ষণ করা হয়েছে। জগদীশচন্দ্র বসু, প্রফুল্লচন্দ্র রায়-সহ বিভিন্ন বিজ্ঞানী প্রেসিডেন্সিতে গবেষণার কাজে যে সব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেছেন, সংগ্রশালায় রয়েছে সে সবও।
প্রেসিডেন্সির মূল ভবনের নীচের তলায় প্রায় দু’হাজার বর্গফুট জুড়ে তৈরি করা হয়েছে এই জাদুঘর। উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া জানান, গত তিন বছর ধরে তাঁরা এই জাদুঘর তৈরির পরিকল্পনা করেছেন। দু’শো বছর পূর্তির অঙ্গ হিসেবেই তৈরি হয়েছে সেটি। তিনি জানান, শুধু এই জাদুঘরই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক’টি ভবনের করিডরেও সাজিয়ে রাখা হবে বিভিন্ন স্মারক। অনুরাধাদেবী বলেন, ‘‘এত স্মারক প্রেসিডেন্সিতে রয়েছে যে, শুধু এই ক্যাম্পাস নয়, তা রাখা যাবে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসেও।’’ প্রসঙ্গত, রাজারহাটে তৈরি হচ্ছে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসটি।
বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা, সত্যেন্দ্রনাথ বসু-সহ আরও বেশ কিছু কৃতী পড়ুয়ার হাজিরার খাতাও থাকবে এই জাদুঘরে। স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রেসিডেন্সির ভূমিকা সংক্রান্ত বেশ কিছু প্রামাণ্য দলিলও জায়গা পাচ্ছে সেখানে। প্রেসিডেন্সির এই সংগ্রহশালা গড়ে তোলার দায়িত্বে আছেন স্বপন চক্রবর্তী। তিনি জানান, এত বছরের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা বিভিন্ন সামগ্রী ও দলিলকে এই জাদুঘরে রাখা হবে।
প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী সংসদের কর্তা বিভাস চৌধুরী এই জাদুঘরের ব্যাপারে আশাবাদী| তিনি বলেন, “আমরা বার বার চেয়েছি প্রেসিডেন্সির ঐতিহ্য যেন কোনওভাবে বিপন্ন না হয়। এগুলো রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য।”
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন