কলকাতা: ‘যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নাম মমতা, সেই রাজ্যের উন্নতি কেউ ঠেকাতে পারবে না৷’ মঙ্গলবার বিশ্ববঙ্গ শিল্প সম্মলনের মঞ্চে দাঁড়িয়ে এই ভাবেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন শিল্পপতি মুকেশ আম্বানি৷ আগামী ৩ বছরে রাজ্যে জিও পরিষেবা ছাড়াও ৫ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের আশ্বাস দিয়েছেন মুকেশ৷ তিনি বলেন, ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল আজ বেস্ট বেঙ্গল৷ বাংলা মানেই বাণিজ্য৷ মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে আজ বাংলার এই অগ্রগতি৷’
মঙ্গলবার থেকেই রাজারহাটে শুরু হয়েছে বিশ্ববঙ্গ শিল্প সম্মলন৷ এই সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন ৩০ টি দেশের প্রতিনিধিরা৷ এই সম্মলনে শিল্পপতিদের চাঁদের হাটের মধ্যে নজর কেড়েছেন মুকেশ আম্বানি,উদয় কোটাক, লক্ষ্মী মিত্তালরা৷ এদিনের সম্মেলনে শিল্পপতিদের মধ্যে প্রথমে মঞ্চে ওঠেন মুকেশ আম্বানি৷ মুকেশের বক্তৃতায় প্রথম থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে শ্রদ্ধা প্রকাশ পেয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘শম্বুক গতিকে বিদায় জানিয়েছে সরকার৷ মমতা দিদিকে শুভেচ্ছা৷ গত কয়েক বছরে এই রাজ্যের মানুষের জীবন অনেক উন্নত হয়েছে৷ বিশেষত শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক জীবনের উন্নতির দিকে নজর রাখছে রাজ্য সরকার৷
বাংলাকে সবরকমভাবে সাহায্যের আশ্বাস দেন মুকেশ আম্বানি৷ এখন বাংলায় শিল্পের জন্য শান্তির পরিবেশ রয়েছে বলেই মনে করছেন তিনি৷ আর এক্ষেত্রে পুরো কৃতিত্বই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিয়েছেন তিনি৷ রিলায়েন্স কর্তা আরও প্রতিশ্রুতি দেন, খুব শীঘ্রই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও পৌঁছে যাবে জিও পরিষেবা৷ কন্যাশ্রীর সাফল্যের জন্য বাংলাকে কুর্নিশ জানান রিলায়েন্স চেয়ারম্যান৷ বক্তব্যের শুরুতে আম্বানি জানিয়ে দেন, যতবার তিনি কলকাতায় আসেন প্রতিবার নতুনভাবে শহরটাকে দেখেন৷ পরিকাঠামোর দিক থেকে এই রাজ্য তুলনাহীন৷ শিল্পক্ষেত্রে শান্তির পরিবেশ রয়েছে। রাজ্য শিল্প মানচিত্রে সামনের সারিতে চলে এসেছে৷ এখানেই প্রশংসায় থামেননি মুকেশ৷ রীতিমতো পরিসংখ্যান দিয়ে জানান একাধিক ক্ষেত্রে দেশ এমনকী মুম্বইয়ের থেকেও এগিয়ে রাজ্য৷
মুকেশ অম্বানীর বক্তব্যের বড় অংশ জুড়েই ছিল বাংলায় জিও পরিসেবা নিয়ে৷ তিনি বলেন, বাংলায় জিও-র প্রায় ২ কোটি গ্রাহক রয়েছেন৷ জিও-র মাধ্যমে প্রায় এক লক্ষ কর্মসংস্থান হয়েছে এ রাজ্যে৷ ভবিষ্যতে যা আরও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন জিও কর্ণধার৷ সংস্থা পশ্চিমবঙ্গের একশো শতাংশ মানুষের কাছে ফোর-জি পরিষেবা পৌঁছে দেবে৷ অর্থাৎ, বাংলার প্রতিটি প্রত্যন্ত গ্রামেও পৌঁছে যাবে জিও-র ফোর-জি পরিষেবা৷ শুধু তাই নয়, আগামী দু’বছরের মধ্যে গোটা রাজ্যকে শক্তিশালী অপটিক ফাইবার নেটওয়ার্কের সাহায্যে জুড়বে জিও৷ স্কুল, কলেজ, হাসপাতালগুলিকে উন্নত এই পরিষেবা দিয়ে সংযুক্ত করার আশ্বাস দিয়েছেন মুকেশ৷ এবার থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাংলায় জিওফোন সরবারহ করবে সংস্থা৷ পাঁচটি জেলায় তৈরি হবে জিও-র ডিজিটাল সার্ভিস সেন্টার৷ গোটা দেশের মধ্যে বাংলাতেই প্রথমবার রিটেল স্টোরগুলিতেও ডিজিটাল ডিভাইসের সাহায্যে পরিষেবা দেবে জিও৷ পাশাপাশি তিনি জানান গত দু বছরে বাংলায় ১৫ হাজার কোটি টাকা লগ্নি করেছে রিলায়েন্স৷
জিও সংক্রান্ত বিনিয়োগ ছাড়াও পেট্রোলিয়াম, রিটেলের মতো রিলায়েন্সের অন্যান্য ব্যবসাতেও আগামী তিন বছরে বাংলায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের আশ্বাস দিয়েছেন মুকেশ৷ অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপ সফলভাবে আয়োজনের জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান রিলায়েন্স চেয়ারম্যান৷ ভবিষ্যতে বাংলার ফুটবলে উন্নয়নের জন্য তৃণমূল স্তরে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন মুকেশ৷ এছাড়া সত্যেন্দ্রনাথ বসুর নামে চেয়ার করবে রিল্যায়েন্স ৷ যার নাম হবে সত্যেন্দ্রনাথ বোস ইনস্টিটিউট চেয়ার ৷ জিও চেইন-এর অন্তর্ভুক্ত করা হবে ৷ ডিজিটাল ইন্ডিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিও যুক্ত হবে বলে জানিয়েছেন রিল্যায়েন্স কর্ণধার মুকেশ আম্বানি ৷
আম্বানির প্রশংসার রেশ দেখা গেল লক্ষ্মী মিত্তলর গলায়৷ এই স্টিল ব্যারনের সঙ্গে কলকাতার যোগ বহু পুরনো৷ সেন্ট জেভিয়ার্সে পড়াশোনা৷ তাই লক্ষ্মী মিত্তল জানান, কলকাতা তাঁর হৃদয়ে। বাংলায় শিল্পক্ষেত্রে সহযোগিতার আশ্বাস তিনি পেয়েছেন৷ রাজ্যে শিল্পের অনুকূল পরিবেশ রয়েছে৷ উৎপাদন থেকে পরিকাঠামো৷ সব ক্ষেত্রেই সম্ভাবনার দরজা বাংলায় খোলা বলে মিত্তল মনে করেন৷ Read More: https://e-aajbikel.blogspot.in
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন