রাজ্যের মোট কর্মীর সংখ্যা কত? জানতে কেন হিমশিম খাচ্ছে বেতন কমিশন? - Aaj Bikel
রাজ্যের মোট কর্মীর সংখ্যা কত? জানতে কেন হিমশিম খাচ্ছে বেতন কমিশন?

রাজ্যের মোট কর্মীর সংখ্যা কত? জানতে কেন হিমশিম খাচ্ছে বেতন কমিশন?

Share This
ষষ্ঠ বেতন কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ এবার শুরু হচ্ছে। যে সব কর্মী সংগঠন ও ব্যক্তিগতভাবে কোনও কর্মী কমিশনের কাছে দাবি সনদ পেশ করেছিলেন, তাঁদের শুনানি হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে এবার সরকারি দপ্তর ও সংস্থাগুলির কাছ থেকে বক্তব্য গ্রহণ করবে কমিশন৷

কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, লিখিতভাবে তাদের বক্তব্য নেওয়া হবে না শুনানি গ্রহণ করা হবে, তা এখনও ঠিক হয়নি। কালীপুজো-ভাইফোঁটার উৎসব শেষ হওয়ার পর এই প্রক্রিয়া শুরু হবে। তবে একটা বিষয় মোটামুটি নিশ্চিত। সেটা হল, কমিশনের কার্যকালের মেয়াদ ফের বাড়তে চলেছে। অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকারের নেতৃত্বে ষষ্ঠ বেতন কমিশন গঠনের বিজ্ঞপ্তি রাজ্য অর্থ দপ্তর জারি করেছিল ২০১৫ সালের ২৭ নভেম্বর। কমিশন যে গঠন করা হচ্ছে, তা সেপ্টেম্বরে ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, ছ’মাসের মধ্যে কমিশন তার সুপারিশ সংবলিত রিপোর্ট সরকারের কাছে পেশ করবে। কিন্তু পরবর্তীকালে প্রথমে কমিশনের কার্যকালের মেয়াদ ছ’মাস বাড়ানো হয়৷

সেই সময়সীমা পার হলে এক বছরের জন্য কমিশনের মেয়াদ বাড়ায় রাজ্য সরকার। সেই মেয়াদও আগামী মাসের শেষের দিকে সমাপ্ত হবে। কিন্তু কমিশনের কাজ এখনও অসমাপ্ত থাকায় তৃতীয়বারের জন্য মেয়াদ বাড়ানো ছাড়া আর কোনও উপায় নেই বলে সংস্থার এক আধিকারিক জানিয়েছেন। এখনও যে কাজ বাকি আছে, তাতে আরও এক বছর সময়সীমা বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। এখন বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও সংস্থাগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ করতে হবে কমিশনকে। এই ধরনের কাজে অনেক বেশি সময় লাগে৷


কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি দপ্তর ও সংস্থায় মোট কর্মীর সংখ্যা কত, সেটাই জানতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সবার কাছে হিসাব চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু অধিকাংশ দপ্তর বা সংস্থা সেই হিসাব দেয়নি। ফলে চূড়ান্ত সংখ্যা নির্ধারণ করা যায়নি। তবে বিভিন্ন সূত্র থেকে খবর নিয়ে কমিশন জানতে পেরেছে, প্রায় আট লক্ষ কর্মীর বেতনের দায় নিতে হয় সরকারের। প্রায় ছ’ লক্ষ পেনশন প্রাপকের দায়িত্ব নিতে হয় সরকারকে। বিভিন্ন কর্মী সংগঠন ও ব্যক্তিগতভাবে কর্মীরা যে সব দাবি পেশ করেছেন, সেব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দপ্তর বা সংস্থাগুলির বক্তব্য জানতে হবে কমিশনকে। তারপর পুরো পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে। অতীতে সরকারি দপ্তর ও সংস্থার বক্তব্য কমিশন লিখিতভাবেও নিয়েছে। এবার কী করা হবে, সেটা কমিশন ঠিক করবে। স্বাভাবিকভাবে সব সরকারি দপ্তর ও সংস্থাকে সল্টলেকের বিকাশ ভবনের অফিসে ডেকে শুনানি নেওয়া হলে সময় বেশি লাগবে৷


কমিশন সূত্রের খবর, রাজ্য সরকার কী চাইছে, সেই অনুযায়ী কাজ হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছেন, ২০১৯ সালের সরকারি কর্মীদের বকেয়া মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) মিটিয়ে দেওয়া হবে। সরকারি কর্মী মহল মনে করছে, ২০১৯ সালে বেতন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী নতুন বেতন হার চালু করা হবে, এটা তার ইঙ্গিতবাহী। কারণ নতুন বেতন হার চালু করার আগে বকেয়া ডিএ মিটিয়ে দিতে হবে। ফলে কমিশনের হাতে এখনও কাজ করার সময় আছে, এটাই মনে করা হচ্ছে৷


কেন্দ্রীয় সরকার ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাস থেকে সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তার কর্মীদের জন্য নতুন বেতন হার চালু করেছে। তারপর তিন দফায় আরও পাঁচ শতাংশ ডিএ দিয়েছে কেন্দ্র। সংশোধিত বেতন হার এবং পরবর্তীকালে দেওয়া ডিএ-র নিরিখে এখন রাজ্য সরকারি কর্মীরা কেন্দ্রীয় কর্মীদের তুলনায় ৫৪ শতাংশ কম ডিএ পাচ্ছেন। সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হওয়ার সময় কেন্দ্রীয় কর্মীরা ১২৫ শতাংশ হারে ডিএ পাচ্ছিলেন। তারপর কেন্দ্রীয় সরকার যে পাঁচ শতাংশ ডিএ দিয়েছে, কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স অনুযায়ী পুরানো বেতন হারের ভিত্তিতে তা ১৪ শতাংশের সমান৷

ফলে যে কর্মীরা এখনও কেন্দ্রীয় হারে বেতন পাচ্ছেন না, তাঁদের প্রাপ্য ডিএ ১৩৯ শতাংশে পৌঁছিয়েছে। সেখানে রাজ্য সরকারি কর্মীরা এখন ৮৫ শতাংশ ডিএ পাচ্ছেন। আগামী জানুযারি মাসে তা ১০০ শতাংশ হবে। কিন্তু নতুন বেতন হার চালু না হওয়ায় অনেক কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা এবং অনেক রাজ্য সরকার কর্মীদের এখনই ১৩৯ শতাংশ হারে ডিএ দিচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া কোনও রাজ্য সরকার কর্মীদের ১২৫ শতাংশের কম হারে ডিএ দিচ্ছে না বলে এখানকার সরকারি কর্মী সংগঠনগুলির দাবি৷

কোন মন্তব্য নেই: