কলকাতা: রাজ্যের প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার সিভিক পুলিশের চাকরি বহাল থেকে গেল। বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিশীথা মাত্রে ও বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ রায়ে বলেছে, এমন নিয়োগের (অস্থায়ী চাকরি) ক্ষেত্রে বিচারবিভাগীয় হস্তক্ষেপ নিষ্প্রোয়জন। দ্বিতীয়ত, চাকরি বাতিল করার আগে চাকরি খোয়াতে চলা সিভিক পুলিশদের বক্তব্য জানা দরকার ছিল। তৃতীয়ত, নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার প্রায় দুই বছর পরে কেন মামলা হল, সেই দেরির সন্তোষজনক ব্যাখ্যা নেই।
বাঁকুড়ার সারেঙ্গা ও বারিকুল থানায় ২০১৩ সালে হওয়া সিভিক পুলিশ নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে ২০১৫ সালে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছিলেন সেখানে চাকরি না পাওয়া প্রার্থীরা। সেই সূত্রে ২০১৬ সালের ১৮ মে বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ওই দুই থানার সব সিভিক পুলিশের নিয়োগ বাতিল করেছিলেন। সেইসঙ্গে রাজ্যের অন্যত্র এমন চাকরি প্রাপকদের ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বরের পর নতুন করে নিয়োগ না করার জন্য নির্দেশ জারি করেছিলেন। যদিও ওই রায়ে রাজ্যে হওয়া এমন যাবতীয় নিয়োগ সংশোধন করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, অর্থ দপ্তরের প্রিন্সিপাল সচিবকে চেয়ারম্যান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করতে হবে। কমিটির বাকি দুই সদস্য হবেন পরিবহণ সচিব এবং বিধাননগর কমিশনারেটের কমিশনার। যে কমিটি রাজ্যে হওয়া বাকি নিয়োগ সংক্রান্ত তথ্য খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেবে। সেইসঙ্গে এমন নিয়োগের জন্য ভবিষ্যতের নির্দেশিকা তৈরি করবে। কিন্তু, রায়টির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রাজ্য সরকার। চাকরিহারা সিভিক পুলিশরাও সরকারের সঙ্গে আদালতের দ্বারস্থ হয়। সেই সূত্রে বেঞ্চ শুনানি শেষ করার দিন বলেছিল, রায় ঘোষিত না হওয়া পর্যন্ত সকলের চাকরি বহাল থাকবে। এদিনের রায়ে যাবতীয় প্রশ্নের অবসান ঘটিয়ে আদালত জানিয়ে দিল, কর্মরত সিভিক পুলিশদের চাকরি নবীকরণ করায় আর কোনও আইনগত বাধা নেই।
এদিকে চাকরি না পাওয়া প্রার্থীদের আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ওই দুই থানার নিয়োগে বিপুল দুর্নীতির সম্যক প্রমাণ মজুত থাকতেও এই রায় হতাশাজনক। ওই প্রার্থীদের পক্ষে এই রায় সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করার মতো আর্থিক ক্ষমতা প্রায় নেই। তবুও বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। অন্যদিকে বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের রায়ে চাকরিহারাদের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সাফ জানালেন, এমন রায় হওয়াই স্বাভাবিক। কারণ, আদালত নিজে থেকে কোনও বিষয়ে খুঁচিয়ে তদন্ত (roving enquiry) করতে পারে না। কিন্ত, বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় সেটাই করেছিলেন। দ্বিতীয়ত, আমার চাকরি খেয়ে নেওয়া হচ্ছে, অথচ, আমাকেই কিছু বলার সুযোগ দেওয়া হবে না, এমনটা হতে পারে না। বিষয়টি এমন যে, আমাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হবে আমার বক্তব্য না শুনেই। তৃতীয়ত, একদিনে ১০ হাজার নিয়োগও যদি হয়ে থাকে, তার মানে সেটি বেআইনি, আইনে এমন প্রশ্ন তোলার সুযোগ কোথাও নেই। কারণ, আবেগে নয়, আদালতে আইনের দৃষ্টিতে, মাপকাঠিতেই বিচার হওয়া উচিত।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন