কি গো ময়লা বুড়ি কেমন আছো? - Aaj Bikel
কি গো ময়লা বুড়ি কেমন আছো?

কি গো ময়লা বুড়ি কেমন আছো?

Share This


আমার শৈশব ছিল দুষ্টুমি এবং দূরন্তপনায় পরিপূর্ণ। নিজেও স্থির থাকতাম না, অন্যকেও থাকতে দিতাম না। আমার শরীরে ক্ষতস্থান দেখলেই বোঝা যায় আমি কেমন ছিলাম।আমার সাথে যে সমস্ত বন্ধুরা ছিল তারাও কম দুষ্টু ছিল না।

অরিন্দম প্রামাণিক
 আমাদের পাশের বাড়িতে, ওরা আমার পরিবারের কেউ নয়, প্রতিবেশী বলাই ঠিক।সেই বাড়িতে একজন বয়স্ক মহিলা ছিল সে ছিল আমাদের ঠাকুমা সম্পর্কের।তার স্বামী অর্থাৎ বর মারা গিয়েছিল ওনার ছেলের বয়স যখন পাঁচ কি ছয় বছর ,আমরা তাকে চোখে দেখিনি।আমরা সেই ঠাকুমার কাছাকাছি থাকতাম, ভিষন বিরক্ত করতাম।ঠাকুমা ছিল খুব ধার্মিক।কারোর ছোঁয়া নেবে না।কারোর দেওয়া খাবার কিছুতেই খাবে না।তবে যদি কেউ অন্য খাবার এনে বলতো -ঠাকুমা এটা তোমার গোপালের প্রসাদ তো ঠাকুমা মহানন্দে প্রাণভরে খেতো।ঠাকুমার মনের ভিতর ছিল সেই সাবেকীয়ানা।এক বিধবার জন্য কি নিয়মকানুন সব মেনে চলতো।

কিসব ব্রত পালন, একাদশী পালন ইত্যাদি ইত্যাদি সব করতো।ঠাকুমা স্বামীর নাম ধরবে না বলে কালোকে ময়লা বলতো।কালোকে ময়লা বলতো সেটা আমার জানা ছিল না।একদিন আমার হাতে দু'টাকা দিয়ে বললো ময়লা জিরে  আনতে, যথারীতি আমি আনতে গেছি,যেই বলেছি ময়লা জিরে দাও অমনি দোকানদার জিনিসপত্র দেওয়ার হাতা নিয়ে আমাকে তাড়া করেছে, আমি এসে বললাম তুমি আমাকে মার খাওয়াতে পাঠিয়েছো? ময়লা জিরে বলে কিছু হয়না, ঠাকুমা তারাতারি পাঁচফোড়ন থেকে কালো জিরে বের করে এনে বললো 'এটা নিয়ে আন'।আমি বললাম এতো কালো জিরে, ঠাকুমা বললো-' এই তো ওই '।আমি বললাম তুমি কালো বলো না কেন? বললো- 'তোর দাদুর নাম ধরতে নেই।"এমনি অনেক ঘটনা ছিল ঠাকুমাকে নিয়ে যা ছিল আমাদের আনন্দদায়ক।

ঠাকুমার এক ছেলে।বিষয় সম্পত্তি ছিল অনেক।ঠাকুমা যেমন ধার্মীক ছিলো তার ছেলে ছিল সম্পূর্ণ উল্টো প্রকৃতির।নেশা করতো, বেপরোয়া জীবনযাপন করতো।ছেলের ইচ্ছাতে তাকে বিয়ে দিতে হলো।বিয়ের পর ঠাকুমার বাড়িতে আমাদের যাওয়া প্রায় বন্ধই হয়ে গেল।সেই বালকসেবা নেব বলে অধীর আগ্রহে চেয়ে থাকতাম ঠাকুমার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।ঠাকুমার সাদা ধপধপে কাপড়ে তেলটিচে ভাব চলে এসেছিল।প্রায় দিনই তার ছেলে গলা ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিত।যেদিন নিজের নামের ভিটেজমিটা ছেলের নামে লিখে দিল সেদিন হাও হাও করে কেঁদেছিল।ঠাকুমার শরীর হঠাৎ করে খারাপ হয়ে গেল।বিছানাশয্যা হয়ে পড়ল।ডাক্তারের রিপোর্টে জানা গেল  জরায়ুতে ক্যানসার হয়েছে,দিন যায় ক্রমে চামড়া হাড় সংলগ্ন হতে থাকে।একদিন আমি দেখতে গেলাম - কি গো ময়লা বুড়ি কেমন আছো? ঠাকুমার দু'চোখ দিয়ে শুধু জল ঝরছে।হয়তো মনে মনে বলছে- " মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভূবনে, মানবের মাঝে বাঁচিবারে চাই।" এ করুন দৃশ্য দেখে থাকতে পারলাম না, চলে এলাম।প'রদিন সন্ধ্যা বেলাতে শুনি মারা গেছে।কেউ বারান্দা থেকে নীচে নামাতে চায়ছে না।শরীর দিয়ে একটা পচা গন্ধ বার হচ্ছে, আমিও গিয়ে থাকতে পারলাম না, ঘরে এসে বডিস্প্রে নিয়ে ঠাকুমার সারা শরীরে ছড়িয়ে দিয়ে বের করে আনা হলো। যতদিন মনটা সতেজ ছিল ততদিন শরীরটা ময়লায় পরিনত হয়নি।মন আজ নেই, শরীরটাই শুধু ময়লাতে ঢেকে ছিল।আগুনের জলন্ত শিখা সমস্ত ময়লাকে ছাইয়ের সাথে মিশিয়ে দিল নতুন মাটি তৈরিতে।

কোন মন্তব্য নেই: