মিডিয়া কী পক্ষপাতদুষ্ট? হলে কতটা? - Aaj Bikel
মিডিয়া কী পক্ষপাতদুষ্ট? হলে কতটা?

মিডিয়া কী পক্ষপাতদুষ্ট? হলে কতটা?

Share This

কলকাতা: সাংবাদিক হতে গেলে দরকার দায়বদ্ধতা। এটা ছাড়া সাংবাদিকতা হতে পারে না। রবিবার কলকাতায় সাংবাদিকতার ছাত্রছাত্রীদের এক কর্মশালায় এই মন্তব্য করেন সংবাদিক অরুণ শ্রীবাস্তব৷ এ দিনের কর্মশালায় অন্য বক্তাদের মধ্যে ছিলেন অধ্যাপিকা ও সমাজকর্মী সৈয়দ তনভীর নাসরিন, প্রাক্তন সম্পাদক রন্তিদেব সেনগুপ্ত, সাংবাদিক রণজিৎ রায়, ‘নবোত্থান‘ পত্রিকার সম্পাদক রথীন্দ্রমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রেস ক্লাবে ‘মিডিয়া টুডে’ শীর্ষক এই কর্মশালার উপলক্ষ ছিল নবোত্থানের চারে পা।

অরুণবাবু ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা লক্ষ্য ঠিক করে নিন— সাংবাদিকতা করবেন, না নিছকই সামিল হবেন একটা পেশায়! সাংবাদিক হতে গেলে লাগবে কমিটমেন্ট। চার দশক আগের পরিস্থিতি এখন নেই। সমাজ পাল্টাচ্ছে। আরও পাল্টাবে। সোস্যাল মিডিয়ার প্রভাব বেড়েছে। এ সবের মধ্যে এই সরল সত্যটা মনে রাখতে হবে মিডিয়া আর জার্নালিজম এক জিনিস নয়।’’

আলোচনার শুরুতেই রণজিৎবাবু বলেন, “একবিংশ শতকে সাংবাদিকতার ধারা অনেকটাই বদলে গিয়েছে। উপস্থিত বক্তাদের সংশ্লিষ্ট মতামত আমাদের ঋদ্ধ করবে।’’ তাঁর আমন্ত্রণে তনভীর নাসরিন আলোচনার রাশ ধরে প্রশ্ন করেন, “মিডিয়া কী পক্ষপাতদুষ্ট? হলে কতটা?’’ উত্তর খুঁজতে গিয়ে তনভীর বলেন, “ইতিহাসচর্চা করতে গিয়ে আমাদের বার বার সংবাদপত্রের পুরনো খবরের সাহায্য নিতে হয়। এই খবর যদি একপেশে বা পক্ষপাতদুষ্ট হয়, মার খাবে ইতিহাসচর্চা। কিন্তু এই ইতিহাসই বলছে যুগে যুগে সব দেশেই মিডডিয়া পক্ষপাত দোষে ভুগেছে।’’

উদাহরণ দিতে গিয়ে তনভীর বলেন, “সত্তরের দশকের প্রথমার্ধে এ দেশের প্রায় সব মিডিয়া আগাম জানিয়েছিল, নির্বাচনে বিপুল ভোটে জিতবেন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। খবরগুলি ভুল প্রমাণিত হয়েছিল। ঠিক এ ভাবেই ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদের ভোটে ও দেশে এমন বাতাবরণ তৈরি হল যে হিলারি ক্লিনটন জিতবেন। ট্রাম্প হারবেন। মিডিয়ার দৌলতে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে গেল সেই হাওয়া। হল তার উল্টো। পরবর্তীকালে অভিযোগ উঠেছে এই হাওয়া সুকৌশলে তৈরি করা হয়েছে।’’

একই অভিজ্ঞতা রন্তিদেবের। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার নির্যাস দিয়ে বললেন, “গত বছর উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনের মুখে ওই রাজ্যে গিয়েছিলাম। প্রচারমাধ্যম প্রায় সবাই একমত, রাহুল গাঁধী-অখিলেশ যাদবের নেতৃত্বাধীন জোট বড়সর ব্যবধানে জিতবেন। আমরা ক‘জন গাড়ি নিয়ে হরিদ্বার গেলাম। সময় যা লাগার কথা, লাগল দেড় গুণ। কারণ, পথে গ্রামেগঞ্জে নানা স্থানে সাধারণ মানুষের মনের ভাব বোঝার চেষ্টা করেছিলাম। তারা কাকে ভোট দেবে? কেন দেবে? প্রচারমাধ্যমের লাগাতার সমীক্ষার সঙ্গে মিলল না আমাদের অভিজ্ঞতা! ফিরে দিল্লিতে এক অভিজ্ঞ সাংবাদিকদের কাছে জানতে চাইলাম, কেন এই বৈপরীত্য? তিনি হেসে বললেন, আমাদের ও রকমই লিখতে হবে!’’

রন্তিদেব বলেন, “অনুজ সাংবাদিকরা এখন আড়ালে বলেন, আগে সংবাদ লেখার জন্য বেতন পেতাম। এখন পাই না লেখার জন্য। মানে সত্যি খবর চাপতে হবে!“ ভাবীকালের সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “মহাভারতের যুদ্ধে শত্রুপক্ষে স্বজনদের দেখে অর্জুন বিচলিত হয়ে পড়লে শ্রীকৃষ্ণ বলেছিলেন, ওঁদের দেখে বিচলিত হয়েও না। ওঁরা কেউ তোমার আত্মীয় নন। আমিও আপনাদের বলছি, কলম যতক্ষণ আপনার হাতে থাকবে, আপনিই শেষ কথা! মিথ্যের সঙ্গে আপোষের পথে হাঁটবেন না।” (হি.স.)

কোন মন্তব্য নেই: